
ঝাড়গ্রাম, ২৬ ডিসেম্বর (হি.স.) : জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম জেলায় ক্রমশ পারদ নামছে। বিগত কয়েকদিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ঘোরাফেরা করছে। কনকনে এই শীতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিরাও জবুথবু অবস্থায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঝাড়গ্রাম জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কে আবাসিক প্রাণীদের সুস্থ রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে বন দফতর ও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
জানা গিয়েছে, তৃণভোজী হরিণদের শরীরে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় গুড় দেওয়া হচ্ছে। রাতের ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে নাইট শেল্টারগুলিতে হিট ব্লোয়ার চালু রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে খড় ও চটের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পশু ও পাখিদের এনক্লোজারগুলিতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক প্রবেশের জন্য আশপাশের শাল সহ অন্যান্য গাছের অতিরিক্ত ডালপালা ছাঁটাই করা হয়েছে।
এছাড়াও চিড়িয়াখানার ক্যাম্পাসে থাকা প্রাণী হাসপাতালটিকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে হলুদ ফিলামেন্ট যুক্ত আলো ও রুম হিটার বসানো হয়েছে, যাতে ঠান্ডাজনিত কোনও সমস্যা না হয়।
এই মুহূর্তে জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক ঝাড়গ্রামের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রাকৃতিক বনভূমির মধ্যে অবস্থিত এই চিড়িয়াখানায় চলতি ডিসেম্বর মাসে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে, যা বিগত বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ১৬ প্রজাতির একশোর বেশি পাখি রয়েছে। এছাড়া চিতল, বার্কিং ডিয়ার, শম্বর ও নীলগাই মিলিয়ে প্রায় ১৫০টি হরিণ রয়েছে। সব মিলিয়ে এখানে রয়েছে ৩৩৯টি বিভিন্ন প্রজাতির পশু, পাখি ও সরীসৃপ।
উল্লেখ্য, ঝাড়গ্রাম শহর থেকে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ধবনি বিট এলাকায় প্রায় ২৩ হেক্টর জঙ্গলঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত এই চিড়িয়াখানা। একসময় উদ্ধার হওয়া হরিণ দিয়েই যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীকালে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর সংযোজন হয়। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর এর নামকরণ হয় ‘জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক’। বর্তমানে আধুনিক প্রাণী হাসপাতাল ও উন্নতমানের এনক্লোজার গড়ে উঠেছে এখানে। চিড়িয়াখানার আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে বাঘ , সজারু, হায়না, নেকড়েবাঘ, ভালুক, ফিসিং ক্যাট, জঙ্গল ক্যাট, কচ্ছপ, ময়ূর, গোসাপ এবং কেইটে, গোখরো, চন্দ্রবোড়া, পাইথন-সহ নানা প্রজাতির সাপ। এছাড়াও বাজ, শকুন-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং নানা প্রজাতির বানর রয়েছে। সম্প্রতি ম্যাকাও, কাকাতুয়া, জঙ্গল ফিজেন্ট-সহ নতুন কিছু পাখির এনক্লোজারও তৈরি হয়েছে। আগামী মাসেই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ও কুমির আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, “শীতের মরশুমে আবাসিক প্রাণীদের সুস্থ রাখতে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / গোপেশ মাহাতো