গুয়াহাটি, ১ অক্টোবর (হি.স.) : অসমে শান্তি ও উন্নয়নের এক নতুন যুগ দিতে সাহায্য করছে আসাম পুলিশ, বলেছেন রাজ্যপাল লক্ষ্মণ প্ৰসাদ আচাৰ্য। আজ মঙ্গলবার ৭৪-তম আসাম পুলিশ দিবস উপলক্ষ্যে গুয়াহাটির কাহিলিপাড়ায় অবস্থিত চতুৰ্থ আসাম পুলিশ ব্যাটালিয়নের ময়দানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্ৰধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দিচ্ছিলেন রাজ্যপাল। আসাম পুলিশের সমস্ত বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন লক্ষ্মণ প্ৰসাদ আচাৰ্য।
রাজ্যপাল আচার্য বলেন, ‘আসাম পুলিশ দিবস আমাদের পুলিশ বাহিনীর সাহসিকতা, উৎসর্গ এবং আত্মত্যাগের উদযাপন। দিনটি সেই চিত্তাকর্ষক যাত্রারও প্রতীক যা আসাম পুলিশ রাজ্যে শান্তি, আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করতে কসরত করছে।’
তিনি বলেন, আসাম পুলিশের প্রায় ২০০ বছরের সমৃদ্ধ ও গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। আসাম পুলিশে জনবল ও দায়িত্বের ক্ষেত্রে একটি ট্রানজিশন সংঘটিত হয়েছে জানিয়ে রাজ্যপাল বলেন, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় আসাম পুলিশের শক্তি ছিল মাত্র আট হাজার। আজ এই শক্তি প্রায় ৭০ হাজার বেড়েছে। তদুপরি, অপরাধ কমিশনের পরিবর্তনশীল গতিশীলতার সাথে আসাম পুলিশের ভূমিকাও নতুন যুগের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এবং তাদের অঙ্কুরে ঠেকানোর ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে।
রাজ্যপাল আরও বলেন, সময়ের সাথে সাথে আসাম পুলিশ জাতিগত দাঙ্গা, উদ্বাস্তু সমস্যা, অনুপ্রবেশ এবং জঙ্গিবাদ সহ অসংখ্য চ্যালেঞ্জ নেভিগেট করেছে। আসাম পুলিশের প্রতিশ্রুতি, উৎসর্গ এবং কর্তব্যপরায়ণতা একে সমস্ত চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করতে এবং প্রতিবার বিজয়ী হতে সাহায্য করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে অসম যে তার বৃদ্ধি এবং বিকাশে নতুন সাফল্য লাভ করেছে সে সম্পর্কেও বলেছেন।
এখন আসাম পুলিশ বাহিনীর সক্রিয় সমর্থনে উন্নয়ন ও শান্তির এক নতুন যুগের সাক্ষী হচ্ছে অসম, বলেন রাজ্যপাল আচাৰ্য। এই শান্তি ও উন্নয়নের জন্য তিনি আসাম পুলিশের অবদানকে স্মরণ করেছেন। তিনি আরও বলেন, আসাম পুলিশ অপরাধ মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে। চার্জশিটের শতাংশও উন্নত হয়েছে। এটি আসাম পুলিশ কর্মীদের প্রতিশ্রুতি এবং উৎসর্গের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। বলেন, অসমে অপরাধের হারের ক্রমহ্রাসমান গ্রাফ প্রকৃতপক্ষে রাজ্য পুলিশের কার্যকারিতার প্রতিফলন। আসাম পুলিশ-কর্মীদের প্রশংসা করে রাজ্যপাল বলেন, পুলিশ বাহিনীর প্রতিশ্রুতি এবং নিষ্ঠার জন্য মামলার তদন্ত ও দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে।
লক্ষ্মণ প্ৰসাদ বলেন, প্রায় ২০০ বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাথে আসাম পুলিশ বাহিনী রাজ্যের শান্তি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী হিসাবে কাজ করে চলেছে। তিনি আরও বলেন, আসাম পুলিশ কেবলমাত্র অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করেনি, বরং অস্ত্রশস্ত্ৰ ও গোলাবারুদ উদ্ধার, অপরাধী দমন, অবৈধ মাদক পাচারে স্প্যানার স্থাপন এবং আইন ভঙ্গকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে চমৎকার কাজ করছে। এই বাহিনী কার্যকরভাবে সাইবার ক্রাইম মোকাবিলা করছে, রাষ্ট্রের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করছে এবং এক শৃঙ্গ-বিশিষ্ট গণ্ডার শিকার বন্ধ করেছে।
রাজ্যপাল বলেন, ‘আমি প্রত্যেক অফিসার ও সৈনিকের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য তাঁদের ভূমিকাকে সাধুবাদ জানাই। আপনাদের উৎসর্গ এবং সাহস জনগণের আস্থা অর্জন করেছে,’ বলেছেন রাজ্যপাল লক্ষ্মণ প্ৰসাদ আচার্য।
আসাম পুলিশ দিবস-এর অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করেছেন রাজ্যের পুলিশ-প্রধান (ডিজিপি) জ্ঞানেন্দ্ৰপ্ৰতাপ সিং। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল পুলিশ কর্মীদের শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন আইজিপি (প্রশাসন) অখিলেশ সিং। স্পেশাল ডিজিপি হরমিত সিং সহ আসাম পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবৰ্গ আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯৫১ সালের ১ অক্টোবর আইপিএস কেআর চৌধুরী প্ৰথম ভারতীয় পুলিশ অফিসার হিসেবে ব্ৰিটিস পুলিশ অফিসার জেএইচ রিড-এর হাত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আসাম পুলিশের প্রধান হিসেবে কাৰ্যভার গ্ৰহণ করেছিলেন। সেই দিন থেকে প্রতি বছর ১ অক্টোবরের দিন আসাম পুলিশকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে এবং রাজ্যের প্রথম ডিজিপি আইপিএস কেআর চৌধুরীকে স্মরণ করতে কেন্দ্ৰীয়ভাবে এবং রাজ্যজুড়ে উৎসাহ ও উচ্ছ্বলতার মাধ্যমে আসাম পুলিশ দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়।
আজ ৭৪-তম আসাম পুলিশ দিবস-এর অনুষ্ঠানে আসাম পুলিশের সমস্ত বাহিনী তাঁদের কলা-কৌশল প্রদর্শন করেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯২৯ সালে সৈয়দ মহম্মদ সাদুল্লা আসাম পুলিশের কমিটি গঠন করেছিলেন। তবে কমিটিটি কাৰ্যকর হয় ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর। কিন্তু কয়েকটি সিদ্ধান্তের পর আসাম পুলিশে এর প্ৰভাব পড়েছিল। আসাম রাইফলসকে আসাম পুলিশ থেকে পৃথক করা হয়। স্বাধীনতার সময় আসাম পুলিশের সংখ্যা ছিল ৮,০০০ (পুলিশ কৰ্মী) এবং অফিসার ছিলেন ৩,৩৫০ জন।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস