সৌম্যজিৎ চক্রবর্তী
কলকাতা, ২৬ ডিসেম্বর (হি.স.): বৃহস্পতিবার সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে দাবাড়ু অনীশ সরকার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর থেকে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় বাল পুরস্কার পাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন তাঁর দাবার শিক্ষক গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়া। তিনি হিন্দুস্থান সমাচারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, অনীশ জিনিয়াস, গড গিফটেড। আগামী দিনে অনীশকে বিশ্বজয়ী হিসেবেই দেখতে চান তিনি।
ছাত্রকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত দিব্যেন্দু বলেন, অনীশ বিস্ময় বালক। আমাদের একাডেমি (ধনুকা ধুনসেরি দিব্যেন্দু বড়ুয়া চেস একাডেমি)-তে সাধারণত পাঁচ বছরের কম বয়সী কাউকে নেওয়া হয় না। কিন্তু ওর অভিভাবক যখন ওকে ধনুকা ধুনসেরি দিব্যেন্দু বড়ুয়া চেস একাডেমিতে নিয়ে আসে, তখন আমি ওর দাবার প্রতি ভালোবাসা দেখে অবাক হয়ে যাই। ওর সঙ্গে কয়েকটা চাল দিয়ে বুঝে যাই ওর প্রতিভা। এও বলেন, উল্টে অনীশও নাকি শুরুতেই দাবার একটা প্রব্লেম সলভ করতে দিয়েছিল স্বয়ং দিব্যেন্দু বাবুকে। তিনি বলেন, ওর মধ্যে আছে জানার–শেখার অদম্য উৎসাহ, কৌতূহল। দাবা নিয়ে নাকি প্রশ্ন করতেই থাকে অনীশ। আর যেটা শেখানো হয়, গেঁথে নেয় মাথার মধ্যে। একাডেমির পাশাপাশি সল্টলেকের বাড়িতে দিব্যেন্দু বাবু ও তাঁর স্ত্রী সহেলি আলাদাভাবেও কখনও কখনও তালিম দেন অনীশকে।
তবে দিব্যেন্দু বাবু এও বলে সতর্ক করে দেন, ওর বয়স একদমই কম। অনেকটা পথ ওকে পাড়ি দিতে হবে। বলেন, পুরস্কার পাওয়ার ভাল-মন্দ দুটি দিকই আছে। একদিকে যেমন পুরস্কার উৎসাহিত করে সামনের দিকে আরও এগিয়ে যাওয়ায়, তেমনই এটা আবার অনেক সময় আত্মতুষ্টিও নিয়ে আসে। তবে অনীশের যা বয়স তাতে এসব অনুভবের সময় আসেনি বলেও জানান তিনি। অনীশের এই পুরস্কার জয়ে তাকে নিয়ে একাডেমির তরফে নতুন করে ভাবা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি ভবনের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ব্যতিক্রমী কৃতিত্বের জন্য ১৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১৭ জন শিশুকে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় বাল পুরস্কার প্রদান করেন। ১৭ জনের মধ্যে ৭ জন ছেলে ও ১০ জন মেয়ে। এই অনুষ্ঠানে সর্বকনিষ্ঠ পুরস্কার বিজয়ী হলেন কলকাতার মাস্টার অনীশ সরকার। যখন শিশুরা প্লে স্কুল এবং নার্সারি ক্লাসে থাকে, মাস্টার অনীশ বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ বিশ্ব র্যাঙ্কিং দাবা খেলোয়াড় হয়েছেন। যে বয়সে বাকিরা আদো-আদো গলায় কথা বলে, যে বয়সে বাচ্চাদের সঙ্গী হয় খেলনা কিংবা কার্টুন দেখা, সেই বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ ফিডে রেটিং পেয়ে গিয়েছে অনীশ। কলকাতার কৈখালির বিস্ময় বালক দাবাড়ু অনীশ সরকার। আগামী প্রজাতন্ত্র দিবসে চার বছর বয়স হবে অনীশের। ঠিক তার এক মাস আগেই অনীশের ঝুলিতে এলো প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় বাল পুরস্কার।
জানা গেছে, সপ্তাহে তিনদিন (বুধবার, শুক্রবার ও শনিবার) দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে অনীশের প্রশিক্ষণ। মাঝে কয়েকবার কিছুক্ষণের বিরতি মিলিয়ে সাকুল্যে ১ ঘন্টার বিশ্রাম। সপ্তাহে তিনদিন প্রায় ৭ ঘন্টা ধরে একভাবে চৌষট্টি খোপের সামনে বসে থাকতে এতটুকু বিরক্ত হয় না অনীশ। বরং, বিরতিতে তার দাবার বোর্ড ছেড়ে আসতেই ইচ্ছা হয়না।
প্রসঙ্গত, ৩ বছর ৮ মাস বয়সেই বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফেলে বাংলার খুদে দাবাড়ু। অনীশ সরকার জায়গা করে নেয় ইতিহাসের পাতায়। কনিষ্ঠতম দাবাড়ু হিসাবে ফিডে রেটিং পায় বাংলার খুদে অনীশ। ভেঙে দেয় তেজস তিওয়ারির রেকর্ড। এন্টালির সেন্ট জেমস স্কুলের পড়ুয়া অনীশ। সবচেয়ে কম বয়সে ফিডে রেটিং অর্জন করে দাবার দুনিয়ায় হইচই ফেলে দিয়েছে এই খুদে। দাবার বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, ফিডে রেটিং অর্জন করতে হলে কোনও ফিডে রেটিং প্রাপ্ত দাবাড়ুকে হারিয়ে এক পয়েন্ট পেতে হবে। তার জন্য সর্বোচ্চ ২৬ মাস সময় দেওয়া হবে, পাঁচজন দাবাড়ুর বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ দেওয়া হবে। অক্টোবর মাসে তিনজনের বিরুদ্ধে খেলেই সেই লক্ষ্য পূরণ করে ফেলেছে অনীশ।
হিন্দুস্থান সমাচার / সৌম্যজিৎ