রবীন্দ্র সরোবরে মাসিক ৮৩১১ টাকা ভাড়ায় পাঁচ বিঘা জমি
অশোক সেনগুপ্ত কলকাতা, ২৭ এপ্রিল (হি.স.): চারিদিকে সবুজ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছেই। এরই মধ্যে খাস কলকাতা
রবীন্দ্র সরোবরে মাসিক ৮৩১১ টাকা ভাড়ায় পাঁচ বিঘা জমি


অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা, ২৭ এপ্রিল (হি.স.): চারিদিকে সবুজ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছেই। এরই মধ্যে খাস কলকাতায় একটি জাতীয় পার্কের জমি হস্তান্তর হয়ে গেল সবার অলক্ষ্যে। তবে তা ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে।

এর সূত্রেই রবীন্দ্র সরোবর আবার উঠে আসছে আলোচনার কেন্দ্রে। পরিবেশ কর্মী সমীর বসু জানান, “সাদার্ণ অ্যাভিনিউ বরাবর যেখানে রবীন্দ্র সরোবরের বেড়া শেষ হয়ে বাঁদিকে রাস্তা ঘুরে লেক গার্ডেন্স সেতুর দিকে যাচ্ছে, ঠিক ওই কোণের প্রায় ৫ বিঘা (৯৮ কাঠা) জমি হস্তান্তর হল মাত্র মাসিক ৮৩১১/- টাকা ভাড়ায়।”

এই হস্তান্তর ঘটল কিন্তু কোন বৃক্ষরোপক বা পরিবেশবান্ধব সংগঠনের জন্য নয়। সেটি দেওয়া হল একটি আমোদপ্রমোদ বিতরণকারী ব্যক্তি মালিকানার কোম্পানীকে। উদ্দেশ্য অবশ্যই প্রমোদ-মনোরঞ্জন।

এমনিতেই সরোবর ও সংলগ্ন বাফার জোন (যেটি বাস্তুতন্ত্রের নিরিখে সরোবরের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যরক্ষা করার জন্য অপরিহার্য) তা এতদিন বিভিন্ন ক্লাবকে মুড়িমুড়কির মতো বিলিয়ে এসেছে সরোবরের পাহারাদার সংস্থা কে এম ডি এ (পূর্বতন কে আই টি)।

পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ সোমেন্দ্র মোহন ঘোষ বলেন, এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার এটি জাতীয় সম্পত্তি, কে এম ডি এ কেবলমাত্র রক্ষক সংস্থা মাত্র। বলা হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে রোয়িং সাঁতার ক্লাব। তাদের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল জমি ও জলসীমা। ফুটবল ও ক্রিকেটের জন্য মাঠের পর মাঠ। এখন সাধারণ ভ্রমণকারীদের পক্ষে বিপজ্জনক তীরন্দাজরাও জমি পেয়েছে।

কীভাবে পাচ্ছে ও পেতে চলেছে তা অনুসন্ধানের বিষয়। পরিবেশবিদ সমীর বসু-সহ অনেকে মনে করছেন এইভাবে বাফার জোন যদি বৃক্ষ ও সবুজশূন্য হয়েই চলে তা সরোবরের জলের উচ্চতা কমার জন্য দায়ী হবে। তাতে জলের মান নামাবে, সেটি হবে জলজীব ও তার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য প্রাণীকূলের মরণফাঁদ।

সমীরবাবু এই প্রতিবেদককে বলেন, রাস্তার যে কার্বন দূষণ এই হেরিটেজ পার্ক ও জাতীয় সরোবরের শ্বাসরোধ করছে তার থেকে নিস্তার পেতে অবিলম্বে সরোবরের সীমানা ধরে ফাঁকা জমিতে বেশ কয়েক সারি বড় গাছ রোপণ করা অত্যন্ত জরুরী।

সরোবরে নিত্য ভ্রমণকারী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জাতীয় (হেরিটেজ) পার্ক বোটানিক্যাল গার্ডেন্সের মধ্যেও অনেক ফাঁকা জমি পড়ে আছে। কই সেখানে তো ক্রীড়ার জন্য সেই জমিগুলি কাউকে দেওয়া হয়না! তবে কেন বারবার বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দক্ষিণ কলকাতার শ্বাসবায়ু রবীন্দ্রসরোবরের ওপর এমন নির্মম আঘাত নেমে আসবে?

সোমেন্দ্র মোহনবাবু বলেন, “পক্ষীবিশারদ, স্বাস্থ্য-ভ্রমণকারীদের অনেকে এবং আমাদের মত যাঁদের সঙ্গে সরোবরের নাড়ির যোগ দীর্ঘদিনের, যাঁরা রবীন্দ্র সরোবরকে ভালবাসেন, এভাবে সেটির ধীর মৃত্যু ঘটানোকে পরিবেশবিরুদ্ধ কাজ বলেই মনে করছেন। হয়ত অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে পরিবেশ-প্রেমীদের জন্যে। তবু, বুধবার সরোবরে একটি তাৎক্ষণিক বিশাল মিছিল সংগঠিত হল।

এ প্রসঙ্গে কেএমডিএ-র এক আধিকারিক বলেন, “সরোবরের জমি পরিবেশপ্রেমীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। ওরা কে এম ডি এর নীতি নির্ধারণ করবে নাকি? এটি প্রমোদে না সামাজিক কাজে লাগানো হবে তা ঠিক করার দায়িত্বে আমাদের সংস্থার কমিটি রয়েছে। পরিস্থিতি, প্রয়োজন বুঝে নির্দিষ্ট কমিটি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়।” তবে, পরিবেশবাদীদের সাম্প্রতিক সমাবেশে আওয়াজ উঠেছে, সরোবরের জমির হস্তান্তর বন্ধ হোক। সবুজ বাঁচাও, সরোবর বাঁচাও। এতে শামিল হয় সবুজ মঞ্চ, রোটারি ক্লাব অফ টালিগঞ্জ প্রভৃতি কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন।

হিন্দুস্থান সমাচার/ অশোক




 

 rajesh pande