পুরসভা ও সরকারের বেপরোয়া দুর্নীতিকে দায়ী করলেন বিশেষজ্ঞ-স্থপতি দীপঙ্কর সিংহ
অশোক সেনগুপ্ত কলকাতা, ১৫ জানুয়ারি (হি.স.): বাঘাযতীনের বাড়ি-কাণ্ডে কলকাতা পুরসভা ও সরকারের বেপরোয়া দুর্নীতি, বেআইনি বাড়ির নির্মাণে লাগাতার প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক মদতকেই দায়ী করলেন কলকাতা পুরসভার স্থপতি, নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনাবিদ, প্রাক্তন মহা-নি
বাঘাযতীনের বাড়ি–কাণ্ড


অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা, ১৫ জানুয়ারি (হি.স.): বাঘাযতীনের বাড়ি-কাণ্ডে কলকাতা পুরসভা ও সরকারের বেপরোয়া দুর্নীতি, বেআইনি বাড়ির নির্মাণে লাগাতার প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক মদতকেই দায়ী করলেন কলকাতা পুরসভার স্থপতি, নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনাবিদ, প্রাক্তন মহা-নির্দেশক (নগর পরিকল্পনা) দীপঙ্কর সিংহ।

এরকম দুর্ঘটনার জন্য মূল দায়ী কে? পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ, না স্থানীয় পুরপিতা, না বিধায়ক? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, “এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী অসাধু প্রমোটার, মানুষের দৈন্যতার কারণে নিম্নমানের বাড়ি ক্রয় করতে বাধ্য হওয়া ও সর্বোপরি কলকাতা পুরসভা ও সরকারের বেপরোয়া দুর্নীতি সমেত বেআইনি বাড়ির নির্মাণে লাগাতার প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক মদত দেওয়া।

বড় দুর্ঘটনা ঘটলে তদন্ত হয়। ব্যস ওই পর্যন্তই। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়না। কেন? ভারতের নগরপরিকল্পনাবিদ প্রতিষ্ঠান (আই টি পি আই)-এর কেন্দ্রীয় পরিচালক সমিতির সদস্য দীপঙ্করবাবু বলেন, “কারণ সর্ষের মধ্যেই ভূত। ওঝা ঝারফুক করবে কি করে? যে দেশে সব কিছুতেই প্রশাসনিক উদ্যোগ চূড়ান্ত দুর্নীতির সাথে যুক্ত, সেখানে তদন্ত ব্যবস্থা ও তদন্তকারী ব্যক্তি দুর্নীতিমুক্ত হবে কী করে? বরং যাকে অভিযুক্ত বলা হয়, বাস্তবে হয়তো দেখা যাবে সে–ই নির্দোষ। নেপোয় মারে দই।”

ভারতের অন্য বড় শহরগুলোতেও কি একই চিত্র? দীপঙ্করবাবুর জবাব, “আইনবহির্ভূতভাবে বাড়ি নির্মাণ এই শহরে ও ভারতের অন্যান্য শহরে বা পৃথিবীর নানা দেশে বহুদিন থেকেই হয়ে আসছে। তবে সেটা নিয়ন্ত্রণের প্রশাসনিক উদ্যোগের উপর বাড়বাড়ন্ত নির্ভরশীল। বর্তমানে আমাদের শহর ও শহরতলির মতো এমন প্রশাসনিক মদত বিরল।”

উন্নত দেশের নির্মাণকাজের সতর্কতার সঙ্গে আমাদের পার্থক্যটা কোথায়? জবাবে দীপঙ্কর সিংহ বলেন, “শুধুমাত্র উন্নততর দেশ না বলে বলতে পারি সামান্য সভ্য দেশেও এই দুর্নীতির বাড়বাড়ন্ত হয়না। আমার বাড়ির পাশে আমার জানালার গা ঘেঁষে একটি বাড়ির নির্মাণ চলছে। অভিযোগ করতে দক্ষিণ দমদম পুরসভা জানালো চারতলা বাড়ির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাড়ির চারিদিকের ছাড় নিয়ে কিছুই জানাল না। এবার চারতলা ছেড়ে আটতলা বাড়ি হয়ে গেল। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হলোনা। হাইকোর্টে আবেদন করা হলো গত দুই মাসে কোনও শুনানির সুযোগ পাওয়া যায়নি। বাড়িটি এখন শেষের পর্যায়ে। আমরা সারাদিন ঘরে আলো জ্বেলে বাস করছি। এসে দেখে যেতে পারেন।

ইতিমধ্যেই পুরসভা আদালতের আবেদনের অনুলিপি পেয়েই আটমাস আগের চিঠির উত্তর দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে ওই বারোফুট রাস্তাতেই চারতলার পরিবর্তন করে সাততলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে দুই বছর আগে। কীকরে জিজ্ঞাসা করবো যে দশ মাস আগে বললেন চারতলা অনুমোদন দিয়েছেন, সেটা সাততলার অনুমোদন দুই বছর আগে হলো কী করে? আর সাততলা বাড়ির কি চারিদিকে কোনও ছাড় লাগেনা? অগ্নি নির্বাপন দফতরের অনুমোদন লাগেনা? এয়ারপোর্ট অথরিটির অনুমোদন লাগেনা? আশেপাশের বাড়ির আলো বাতাসের দরকার নাই? পুরসভা যদি সক্রিয়ভাবে এই ভূমিকা নেয়, তবে প্রমোটার তো করবেই।

প্রসঙ্গত আমার বাড়ির পাশের এই জমির মালিক ওই প্রমোটার নয়। তাই নিয়ে একটি নিম্ন আদালতের ইঞ্জাংশন আছে। তাকে এরা থোরাই কেয়ার করে। এখানে আরও এমন অনেক বাড়ি হচ্ছে। আগ্রহ থাকলে চাক্ষুষ করতে পারেন। সাতফুট রাস্তাতেই আটতলা বাড়ি হয়েছে। যে কোনওদিন পড়বে। আমিও বাঁচবো কিনা জানিনা। তাই আর উন্নত দেশের কথা বললাম না।

হেলে যাওয়া বাড়ি প্রযুক্তিগতভাবে সোজা করার সঠিক পদ্ধতি কী? দীপঙ্করবাবুর জবাব, “সেই কাজ করতে গেলে বাড়িটি নিজে যথেষ্ট শক্তির হওয়া চাই ও পাশের মাটি ভার নেয়ার মতো শক্ত হতে হবে। প্রতিটি জানালা, দরজা, দালানের ফাঁকা অংশ শক্ত কাঠ ও লোহা দিয়ে কোনাকুনি ব্রেসিং করে নিতে হয়, যাতে পুরো কাঠামো একসাথে নড়ানো যায় ও কোন অংশ বেঁকে না যায়। দৃশ্যত তা করা হয়নি। তাই দোষ প্রযুক্তিগত নয়। দোষ আমার জন্মভূমির।”

---------------

হিন্দুস্থান সমাচার / অশোক সেনগুপ্ত




 

 rajesh pande