এমবিবি কলেজ লেকের কৃত্রিম সৌন্দর্যায়নে পরিবেশবিদদের ক্ষোভ
মানবাধিকার কমিশনের নোটিশে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন
কলেজ লেক


আগরতলা, ১৮ অক্টোবর (হি.স.) : আগরতলা স্মার্ট সিটি প্রকল্পের অধীনে এমবিবি কলেজ লেকের সৌন্দর্যায়ন ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। তবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে কৃত্রিম উপায়ে গড়ে তোলা এই সৌন্দর্যায়ন নিয়ে পরিবেশপ্রেমী মহল ও বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে ত্রিপুরা মানবাধিকার কমিশনে মামলা দায়ের হওয়ার পর কমিশন থেকে রাজ্যের একাধিক দফতরে নোটিশ পাঠানো হয়। শনিবার রাজ্য সরকারের ল্যান্ড অ্যান্ড রেভিনিউ দফতরের এক সমীক্ষক দল কলেজ লেক পরিদর্শনে গিয়ে পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে।

সমীক্ষক দলের সদস্যরা জানান, এমবিবি কলেজ লেকের এই কৃত্রিম উন্নয়নের জন্য আগরতলা পুর নিগম বা অন্য কোনো দফতরের অনুমতি নেওয়া হয়নি। এর ফলে লেকের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জৈব বৈচিত্র্যের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আগে শীতকালে ২৭-২৮ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এই লেকে আশ্রয় নিত। এখন সেই পাখিদের দেখা মিলছে না। দলের এক সদস্যের ভাষায়, “এটি উন্নয়ন নয়, উন্নয়নের নামে প্রকৃতির ধ্বংস।”

দলের অপর সদস্য তথা বিশিষ্ট সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য জানান, কলেজ লেকের সৌন্দর্যায়ন নিয়ে পূর্বে এক স্টেকহোল্ডার বৈঠকেও পরিবেশভিত্তিক সংস্থাগুলি তীব্র আপত্তি তুলেছিল। তাদের আশঙ্কা ছিল, এই ধরনের প্রকল্পে প্রাণীদের চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হবে — যা শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “এই লেক ও আশপাশের গাছপালাকে কেন্দ্র করে বাদুড়দের একটি স্বাভাবিক আবাসস্থল তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান কাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে তারাও স্থানচ্যুত হয়েছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে লেকের মাঝখানে ব্রীজ নির্মাণের ফলে—এটি জলাশয়কে বিভক্ত করেছে।”

সমীক্ষক দলটি পরিদর্শনের পর ল্যান্ড অ্যান্ড রেভিনিউ দফতরে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে দফতর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলে সূত্রে জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শহুরে সৌন্দর্যায়নের নামে প্রকৃতিকে ধ্বংস করলে তার প্রভাব সরাসরি পড়বে আগরতলার পরিবেশের উপর। ইতিমধ্যেই কাক, চড়াই, শালিক ও ডাহুকের মতো স্থানীয় পাখির সংখ্যা কমে গেছে। এবার এমবিবি কলেজ লেকের কৃত্রিম সৌন্দর্যায়নের ফলে শহর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পরিযায়ী পাখিদের ডাকও।

হিন্দুস্থান সমাচার / গোবিন্দ দেবনাথ




 

 rajesh pande