হাওড়া, ১৯ অক্টোবর (হি.স.): মিস্ট্রি এবং হিস্ট্রি, এককথায় এই দুটি শব্দেই ব্যাখ্যা করা চলে হাওড়ার জানবাড়িকে। গত কয়েক শতাব্দী ধরে আগাগোড়া রহস্যে মোড়া হয়েই থেকে গেছে তন্ত্রসাধনার এই পীঠস্থান। তবে সেসব ছাপিয়েও আদতে হাওড়ার এক জলজ্যান্ত ইতিহাসের আখড়া হয়ে থেকে গেছে এই 'জান' কালীবাড়ি।
জানা যায়, নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর এক শাস্ত্রজ্ঞকে প্রায় ২০০ বিঘে নিষ্কর জমি দিয়েছিলেন হাওড়ার বেলকুলিতে (অধুনা চক্রবেড়িয়া)। শাস্ত্রজ্ঞ-র উত্তরপুরুষ অচ্যুত পঞ্চাননের হাত ধরেই 'জান' পরম্পরার সূত্রপাত। লোকশ্রুতি, অচ্যুত পঞ্চানন একটি কালীর শীলামূর্তি পেয়ে পুজো শুরু করেন। তাঁর বংশধর রামকুমার ভট্টাচার্য এই মূর্তি নিয়ে চক্রবেড়িয়ায় (পূর্বতন বেলকুলি) এসে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন।
সেসময়ে জ্ঞানী বা সর্বজ্ঞ বা শাস্ত্রজ্ঞ বোঝাতে এই 'জান' উপাধি ব্যবহার করা হতো। 'জান' শব্দটি জ্ঞান-এর অপভ্রংশ। তৎকালীন রামকুমার থেকে রামপ্রসাদ ভট্টাচার্য সবাই ‘জান’। সেই থেকেই এই বাড়ির নামকরণ 'জান'বাড়ি। এই বাড়ির সদস্যরা ক্রমেই হয়ে উঠলেন ভূত-ভবিষ্যৎ বক্তা। পেশা হিসাবে কোষ্ঠীবিচার, জোতিষচর্চা শুরু করেন এই পরিবারের বংশধররা।
সেই পরম্পরা আজও বহমান। যদিও এখন শরিকি টানাপোড়েনে বহুধা বিভক্ত জানবাড়ি। আদি বাড়িটি তলিয়েছে কালের গর্ভে। বর্তমানে হাওড়ার দালালপুকুরের কাছে বেশ কয়েকটি শরিকি বাড়ির একটিতে রয়েছে কালী মন্দির। এঁদের পূর্বপুরুষ অচ্যুত পঞ্চাননের পাওয়া পাথরের সেই ৮ ইঞ্চির কালীশীলাটি প্রথমে একটি বড় মাটির মূর্তি গড়ে প্রতিমার বুকে স্থাপন করা হয়েছিল। মূর্তিটি পরে সিমেন্টের তৈরি করা হয়। দেবীমূর্তি বহুবার বদলালেও কালীশিলাটি প্রতিবারই মূর্তির মধ্যেই স্থাপিত হয়েছে।
জানবাড়ির মূল আকর্ষণ পঞ্চমুণ্ডীর আসন। কয়েকটি বিশেষ তিথিতেই জনসাধারণ এই পঞ্চমুণ্ডীর আসন দর্শনের সুযোগ পায়। তবে শুধু সেইসব বিশেষ তিথিতেই নয়, জানবাড়িতে ভিড় জমে সারাবছরই। ভক্তরা কখনও নিজেদের ভাগ্যবিচারের জন্য, কখনও আবার সুরাহার পথ খুঁজতে প্রতিদিনই ভিড় জমান এখানে।
হিন্দুস্থান সমাচার / সৌম্যজিৎ