

- লক্ষ্মীপুরে ‘নিযুত মইনা ২.০’-এর অধীনে কন্যাশক্তির ঐতিহাসিক উদযাপন
শিলচর (অসম), ২৭ অক্টোবর (হি.স.) : কাছাড় জেলার অন্তর্গত লক্ষ্মীপুরের লাবক চা বাগানের মাঠ সোমবার সাক্ষী হয়েছে এক অনন্য মুহূর্তের, যেখানে উৎসব, আশা ও প্রেরণার এক মিলন ঘটেছে কন্যাশক্তির উদযাপনে। মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার দূরদর্শী নেতৃত্বে অসম সরকারের উদ্যোগ ‘মুখ্যমন্ত্রী নিযুত মইনা ২.০’ প্রকল্পের অন্তর্গত কন্যাশিক্ষা ও নারী ক্ষমতায়নের এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য, গণবণ্টন, ভোক্তা সুরক্ষা, খনিজ ও খনিজ সম্পদ এবং বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী কৌশিক রায়।
মন্ত্রী রায় এক আবেগঘন ভাষণে বলেন, ‘ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা কেবল একজন মুখ্যমন্ত্রী নন, তিনি অসমের সামাজিক পুনর্গঠনের একজন দূরদর্শী স্থপতি, যিনি মর্যাদা, শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের স্তম্ভের ওপর এক নতুন সমাজ গড়ে তুলেছেন।’ কৌশক রায় বলেন, ‘ড. শর্মার স্বপ্ন হলো এমন এক অসম গড়া, যেখানে প্রতিটি কন্যাসন্তান শিক্ষিত, আত্মবিশ্বাসী ও স্বাধীনভাবে নিজের ভাগ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। মুখ্যমন্ত্রী নিযুত মইনা প্রকল্প কেবল একটি সরকারি প্রকল্প নয়, এটি একটি সামাজিক অঙ্গীকার, একটি আশার প্রতিশ্রুতি যা প্রতিটি কন্যার ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করছে।’
তিনি বলেন, ‘ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে অসম এমন অনেক সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে, যা বহু দশক ধরে আমাদের সমাজে অবহেলিত ছিল। অল্পবয়সি বিবাহ প্রথা নির্মূলের যে অভিযান তিনি শুরু করেছেন, তা ক্রোধ নয়, সহানুভূতির যুদ্ধ। এটি কোনও শাস্তির পথ নয়, বরং সুযোগ সৃষ্টি করার পথ। শিক্ষা হলো সেই শক্তিশালী অস্ত্র, যা এই সমাজকে আলোকিত করবে।’
মন্ত্ৰী রায় আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার নিশ্চিত করছে যাতে কোনও কন্যাসন্তান অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে তার শিক্ষা বন্ধ করতে বাধ্য না হয়। সরকারের প্রদত্ত এই আর্থিক সহায়তা কেবল টাকা নয়, এটি সরকারের বিশ্বাস ও ভরসার প্রতীক। অসম সরকার আজ প্রতিটি কন্যার পাশে রয়েছে, তাদের সাহস, তার স্বপ্ন, তার ভবিষ্যতের পাশে।’
রায় আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে কন্যাশিক্ষার প্রসার ঘটবে, স্কুল ও কলেজে মেয়েদের শিক্ষার হার বাড়বে এবং ভবিষ্যতে অসমের নেতৃত্বে নারীরা আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। শিক্ষিত ও আত্মনির্ভর নারীই আগামী দিনের নতুন অসম গড়বেন।’
তিনি সমাজের সকল স্তর শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলির ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘সরকার একা এই পথ চলা সম্পূর্ণ করতে পারবে না। সমাজের প্রতিটি স্তরের সহযোগিতা ও উৎসর্গই এই আন্দোলনের শক্তি। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব কন্যাশিক্ষাকে আন্দোলনে পরিণত করা। সরকারের অঙ্গীকার স্পষ্ট, আমরা এমন এক অসম গড়তে চাই, যেখানে নারী আর পরিস্থিতির শিকার নয়, বরং পরিবর্তনের অগ্রদূত হবে।’
অনুষ্ঠানের সূচনায় লক্ষ্মীপুর সম-জেলার আয়ুক্ত ধ্রুবজ্যোতি পাঠক স্বাগত ভাষণ দেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী নিযুত মইনা প্রকল্পের উদ্দেশ্য কেবল আর্থিক সহায়তা নয়, বরং সমাজের কুপ্রথা বিশেষত অল্পবয়সি বিবাহ দূর করা এবং কন্যাশিক্ষাকে উৎসাহিত করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে বহু মেয়ে আজ নতুন উদ্যমে পড়াশোনায় মন দিচ্ছে এবং তাঁদের জীবনে এসেছে পরিবর্তনের নতুন অধ্যায়।’
সম-জেলা আয়ুক্ত মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার শিক্ষানীতি ও দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করে বলেন, ‘কাছাড় জেলায় শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রীর নিরলস প্রচেষ্টা প্রশংসার যোগ্য।’
উৎসবমুখর ও আবেগঘন পরিবেশে আয়োজিত এদিনের অনুষ্ঠানে লক্ষ্মীপুর বিধানসভা এলাকার ১,৪৭৭ জন কন্যা শিক্ষার্থীকে ‘মুখ্যমন্ত্রী নিযুত মইনা ২.০’ প্রকল্পের আওতায় আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করা হয়েছে। উপস্থিত ছাত্রীগণ, শিক্ষক-অভিভাবক এবং স্থানীয় মানুষের মুখে ফুটে উঠেছে এক নতুন আশার আলো, এক এমন অসমের প্রতিচ্ছবি যেখানে প্রতিটি মেয়ে শিক্ষিত, আত্মবিশ্বাসী ও স্বাধীনতার স্বপ্নে উজ্জ্বল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর মিউনিসিপাল বোর্ডের চেয়ারম্যান মৃণালকান্তি দাস, মণিপুরি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারপার্সন রীনা সিংহ, বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও শিক্ষাবিদ সঞ্জয়কুমার ঠাকুর, দেবজ্যোতি বাউরি, কিষণ রিকিয়াসন, বিজয়েতা মাহাতো, সীমা দেব, গুঞ্জন কর, শুভঙ্কর গওলা প্রমুখ।
দিনের শেষে সমবেত জনতার করতালিতে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল এক নতুন বার্তা, কন্যাশিক্ষা আর কোনও বিকল্প নয়, এটি এখন অসমের ভবিষ্যতের প্রধান ভিত্তি। মন্ত্রী কৌশিক রায়ের কথায়, ‘আমরা সেই অসম গড়ছি, যেখানে প্রতিটি মেয়ে নিজের ভাগ্য নিজেই লিখবে। এই আন্দোলন থেমে থাকবে না, যতদিন না-প্রতিটি কন্যা তার স্বপ্ন পূরণের পথ খুঁজে পাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী নিযুত মইনা প্রকল্প অসম সরকারের এক দূরদর্শী উদ্যোগ, যার মূল উদ্দেশ্য রাজ্যের মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী করা, তাঁদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলা এবং বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক কুপ্রথা দূর করা। এই প্রকল্পের আওতায় উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা বছরে ১০ হজার টাকা এবং স্নাতক স্তরের শিক্ষার্থীরা বছরে ১২,৫০০ টাকা আর্থিক সহায়তা পান, যা মাসিক ভিত্তিতে শিক্ষার সহায়ক অনুদান হিসেবে প্রদান করা হয়। এই প্রকল্পের সুবিধা কেবল অসমের স্থায়ী বাসিন্দা অবিবাহিত মেয়েদের জন্য নির্ধারিত এবং আবেদনকারীদের নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও শর্তাবলী পূরণ করতে হয়। প্রকল্পের এই সহায়তা কেবল অর্থনৈতিক প্রণোদনা নয়, বরং প্রতিটি কন্যার স্বপ্নপূরণের পথে সরকারের আন্তরিক প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন, একটি আলোকিত, শিক্ষিত ও সচেতন অসম গঠনের পথে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস