
দুর্গাপুর, ২০ নভেম্বর (হি.স.) : রাতে অবাধে চলছে বালি তোলা ও পাচার, আর দিনের বেলায় ‘দেখানো অভিযান’ । অজয় নদ ঘিরে লাউদোহা ও কাঁকসায় তৈরি হয়েছে ঠিক এই চিত্রই। অভিযোগ, শাসকদল ও কিছু পুলিশকর্মীর ছত্রচ্ছায়ায় চলছে কোটি টাকার এই বেআইনি কারবার। ফলে প্রশ্নের মুখে প্রশাসনের ভূমিকা।
নভেম্বরের শুরু থেকেই অজয় ও দামোদর নদী গর্ভে ফের শুরু হয়েছে বালি তোলার হিড়িক। রাত নামতেই নদীর বুক চিরে ট্রাক্টর, লরি, ডাম্পার ব্যস্ত হয়ে পড়ে বালি বোঝাই করতে। কাঁকসার বনকাটি, সাতকাহানি শ্মশানঘাট, পেয়ারাবাগান, নিমটুকরি, কোটালপুকুর, কাজলাডিহি থেকে লাউদোহার গৌরবাজার-মাধাইপুর সব ঘাটেই চলছে একই চিত্র। গ্রামবাসীর অভিযোগ, বেপরোয়া ট্রাক্টর চলাচলে আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।
স্থানীয়দের দাবি, রাতে কমপক্ষে পঞ্চাশের বেশি ট্রাক্টর বালি তুলে গৌরবাজার ও বিলপাড়ার ওয়েব্রিজে মজুত করছে। সেখান থেকে লরি-ডাম্পারে বোঝাই হয়ে বালি যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। পুলিশের হানার মুখে মাঝপথে ‘রফা’ করে ছাড়া এমন অভিযোগও তুলেছে বিজেপি।
বুদবুদেও একই ছবি। দামোদরের রনডিহা, শাকুড়ি, মুন্সীপুর, শালডাঙা সব ঘাটেই দিনে-রাতে অবাধে উত্তোলন চলছে। অভিযোগ, রনডিহা গেস্টহাউস মাঠে ও শালডাঙা ক্যানেলপাড়ে বালি জমিয়ে পরে বড় গাড়িতে পাঠানো হচ্ছে শহরমুখে। পাণ্ডবেশ্বর, মানাচর, গৌরবাজারেও নাকি ওয়েব্রিজের আড়ালে দিনরাত শ’খানেক ট্রাক্টর বালি বহন করছে। সেখান থেকে ট্রাক-ডাম্পার কাঁকসার শিবপুর-মলানদীঘি হয়ে জাতীয় সড়কে উঠে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে ঘাট দখল নিয়ে দুই মাফিয়া গোষ্ঠীর সংঘর্ষে সাতকাহানিয়া এলাকায় আহত হয়েছেন কয়েকজন। একজন গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে। বিজেপির অভিযোগ, “শাসকদল, পুলিশ ও প্রশাসনের মদতেই চলছে বালির লুটতরাজ। নির্বাচনের আগে ঘাট দখল নিয়ে সংঘর্ষ আরও বাড়ছে।” তাদের দাবি, কাঁকসার কোটালপুকুর, সাতকাহানিয়া, পেয়ারাবাগানে ট্রাক্টর প্রতি ২০০-৩০০ টাকা করে ‘খয়রাতি’ আদায় করা হচ্ছে। দিনে অভিযানে কিছুই মেলে না। এ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বৃহস্পতিবার কাঁকসার বসুধা এলাকায় অভিযান চালালেও একটি গাড়িও ধরা পড়েনি।
কাঁকসা বনকাটি পঞ্চায়েত প্রধান তাবাসুম খাতুন বলেন, “গ্রামবাসীরা অভিযোগ জানিয়েছে। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি।”
অন্যদিকে কাঁকসার বিএলআরও মঞ্জু কাঞ্জিলাল বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান করা হয়েছে। অভিযানের সময় বালি তোলা চলছিল না। রাস্তায় ট্রাক্টরের চিহ্ন মিলেছে। নিয়মিত অভিযান চলবে।” তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন, রাতে যখন পাচার চলে, তখন অভিযান কেন নয়? আর যেখানে রমরমিয়ে ব্যবসা চলে, সেই ঘাটে অভিযান কেন হয় না? প্রশাসন-শাসকদল-মাফিয়া যোগ নিয়ে তাই আরও জোরালো হয়েছে বিতর্ক।
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / জয়দেব লাহা