
কলকাতা, ৭ নভেম্বর (হি.স.): লরেটো কলেজ কলকাতার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার আয়োজিত হলো এক বিশেষ আলোচনা সভা। সেখানে ‘মনোজুকুরি’-র দর্শন তুলে ধরেন জাপানের ডেপুটি কনসাল জেনারেল আশিদা কাতসুনোরি। মূলত প্রথম সেমিস্টারের ছাত্রীদের জন্য অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় আশিদা কাতসুনোরির পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন জাপান দূতাবাসের সাংস্কৃতিক বিষয়ক আধিকারিক গৌতম রায় এবং প্রোগ্রাম ও মিডিয়া আধিকারিক ইশারা হাজরা।
এদিনের এই আলোচনা সভায় ডেপুটি কনসাল জেনারেল আশিদা কাতসুনোরি জাপানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির উপর আলোচনা করেন। তিনি বিশেষভাবে আলোকপাত করেন ‘মনোজুকুরি’ ধারণার উপর—যা জাপানের কারিগরি নিষ্ঠা ও ক্রমাগত উৎকর্ষ সাধনের মানসিকতার প্রতীক। তিনি উল্লেখ করেন, ষোড়শ শতক থেকেই জাপান বিদেশি প্রযুক্তি গ্রহণ করে তা নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী উন্নত করার ঐতিহ্য গড়ে তুলেছে। আগ্নেয়াস্ত্র ও জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমেই উনিশ শতকে জাপান তার স্বাধীনতা রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন যে, জাপান বর্তমানে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির দিকেও আলোকপাত করেছে। আধুনিক স্মার্টফোনে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান—যেমন ক্যাপাসিটার, সেমিকন্ডাক্টর ও ফটো-রেজিস্ট কেমিক্যাল—মূলত জাপানেই উৎপাদিত হয়। সূক্ষ্মতা ও মানের প্রতি তাঁদের অবিচল মনোযোগই সাফল্যের চাবিকাঠি বলে তিনি মন্তব্য করেন। কিউআর কোডের উদ্ভাবনকেও তিনি জাপানের উদ্ভাবনী মনোভাবের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। জাপানের কার্বনমুক্ত ভবিষ্যৎ গঠনের পরিকল্পনার কথাও তিনি শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন। হাইড্রোজেন চালিত বাস থেকে শুরু করে রান্নায় হাইড্রোজেন ব্যবহারের উদাহরণ দিয়ে তিনি জাপানের টেকসই প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগের ব্যাখ্যা দেন।
শিক্ষার্থীদের আশিদা কাতসুনোরি বলেন, জাপানি ভাষা শেখা ভবিষ্যতের এক অনন্য পেশাগত সুযোগের দ্বার খুলে দিতে পারে। আন্তর্জাতিক ব্যবসা, প্রযুক্তি ও গবেষণাক্ষেত্রে জাপানি ভাষাজ্ঞান এক মূল্যবান দক্ষতা হিসেবে বিবেচিত। তিনি জাপানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য উপলব্ধ বিভিন্ন বৃত্তি ও উচ্চশিক্ষা কর্মসূচির কথাও তুলে ধরেন এবং শিক্ষার্থীদের জাপানের নিরাপদ ও উদ্ভাবননির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, লরেটো কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে এই অধিবেশন ছিল এক অনুপ্রেরণামূলক অভিজ্ঞতা। অধ্যাপকদের মতে, এই উদ্যোগ পড়ুয়াদের জাপানের উৎকর্ষ, উদ্ভাবন ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি দিয়েছে এবং ভবিষ্যৎ শিক্ষা ও পেশাগত সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / সৌম্যজিৎ