
অরুণাচল প্রদেশে গ্রেফতার কাশ্মীরের কুপওয়ারার চার বাসিন্দা
গুয়াহাটি, ১৩ ডিসেম্বর (হি.স.) : পাকিস্তানের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের অভিযোগে উত্তর অসমের শোণিতপুর জেলা সদর তেজপুরের পটিয়া এলাকার বাসিন্দা ভারতীয় বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত জুনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার ৬৪ বছর বয়সি কুলেন্দ্র শর্মাকে গ্রেফতার করেছে অরুণাচল প্ৰদেশের পুলিশ।
আজ শনিবার শোণিতপুরের সিনিয়র পুলিশ সুপার (এসএসপি) বরুণ পুরকায়স্থ এ খবর দিয়ে জানান, ‘পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের কাছে সংবেদনশীল তথ্য পাচারের অভিযোগে ভারতীয় বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক কুলেন্দ্র শর্মাকে শুক্ৰবার গভীর রাতে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে অরুণাচল প্রদেশ পুলিশ।’
তিনি জানান, ‘দিন-কয়েক আগে অরুণাচল প্রদেশের পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তাঁর সম্পর্কে বেশ কয়েকজন মানুষের কাছে খবর নিয়েছি। আমরা তাঁকে টেকনিক্যাল সারভেইল্যান্স-এ রেখেছিলাম। ধীরে ধীরে তাঁর কার্যকলাপ ধরা পড়ছিল। প্রমাণ সংগ্রহ করতে আমরা সময় নিচ্ছিলাম। অবশেষে পর্যাপ্ত প্রমাণ হাতে আসার পর গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে।’
গ্রেফতারের সময় অভিযুক্তের ব্যবহৃত ল্যাপটপ এবং সিম সহ মোবাইল ফোনের হ্যান্ডসেট বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি ফরেনসিক অ্যানালাইসিসের জন্য পাঠানো হয়েছে। আশঙ্কা প্রকাশ করে পুলিশ সুপার বরুণ পুরকায়স্থ বলেন, মনে হচ্ছে, ডেটার কিছু অংশ ডিলিট করা হয়েছে। ডেটাগুলি যদি ডিলিট করে দেওয়া হয়, তা-হলে ফরেনসিক অ্যানালাইসিস জটিল হতে পারে।
তিনি জানান, মূলত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২১ নভেম্বর ইটানগর (অরুণাচল প্রদেশ) পুলিশ গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে কাশ্মীরের কুপওয়ারার বাসিন্দা নাজির আহমেদ মালিক এবং সাবির আহমেদ মিরকে গ্রেফতার করেছিল। তারা টেলিগ্রাম চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের পাকিস্তানি সহযোগীদের সাথে অরুণাচলে সেনাবাহিনীর গতিবিধি এবং স্থাপনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করত।
পরবৰ্তীতে ইটানগর পুলিশের শেয়ারকৃত তথ্যের ভিত্তিতে পশ্চিম সিয়াং পুলিশ আলো থেকে হিলাল আহমেদ এবং চাংলাং পুলিশ মিয়াও থেকে গুলাম মহম্মদ মিরকে গ্রেফতার করে। এই দুজনও কুপওয়ারার বাসিন্দা। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এ নিয়ে কাশ্মীরের চার এবং অসমের একজন কুলেন্দ্র শর্মাকে গ্রেফতার করেছে অরুণাচল প্রদেশ পুলিশ।
পুলিশ সুপার জানান, জাতীয় সুরক্ষাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে গোপন টেকনিক্যাল পদ্ধতিতে দেশের গোপনীয় তথ্য পাচার করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে কুলেন্দ্র শর্মার বিরুদ্ধে।
পুলিশ সুপার পুরকায়স্থ বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধরা পড়েছে, অভিযুক্ত শর্মা পাকিস্তানের সাথে যুক্ত অপারেটিভদের কাছে টেলিগ্রাম চ্যানেলের মাধ্যমে সংবেদনশীল উপাদান প্রেরণ করতেন।
তিনি জানান, অভিযুক্ত কুলেন্দ্ৰ শৰ্মার বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-র ধারা ১৫২ (রাষ্ট্রদ্রোহ), ১৪৭ এবং ১৪৮ (ভারতের বিরুদ্ধে দাঙ্গা এবং ষড়যন্ত্র), ২৩৮ (অপরাধের প্রমাণ হারিয়ে ফেলা) এবং ৬১ (২) (অপরাধী ষড়যন্ত্র) রুজু করা করা হয়েছে। গুপ্তচরবৃত্তি সংকরান্ত আরও তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া এ ধরনের অপকর্মে তাঁর সঙ্গে স্থানীয় কোনও সহযোগী আছে কিনা তা জানারও চেষ্টা করছে পুলিশ। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা আধিকারিকরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন বলেও জানান সিনিয়র পুলিশ সুপার বরুণ পুরকায়স্থ।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০০২ সালে অবসরপ্রাপ্ত কুলেন্দ্র শর্মার শেষ পোস্টিং ছিল তাঁর গৃহজেলা সদর তেজপুরে অবস্থিত এয়ার ফোর্স স্টেশনে। এর পর অল্প দিনের জন্য তিনি তেজপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন। প্রসঙ্গত, ভারতীয় বিমানবাহিনীর তেজপুর ঘাঁটিতে সুখোই ৩০ স্কোয়াড্রন সহ গুরুত্বপূর্ণ বহু বিমান সম্পদ রয়েছে।
এদিকে শোণিতপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হরিচরণ ভূমিজ বলেন, আসাম পুলিশের সন্দেহভাজন গুপ্তচরবৃত্তি এবং বিদেশী-সংযুক্ত নেটওয়ার্কগুলির বিরুদ্ধে, বিশেষত রাজ্যের সংবেদনশীল অঞ্চলগুলিতে কঠোর নজরদারির মধ্যে এ সব গ্রেফতারি চলছে।
তিনি জানান, পৃথক, সম্পর্কিত নিরাপত্তা এবং আর্থিক অপরাধ তদন্তে আসাম পুলিশ গত ৫ ডিসেম্বর শোণিতপুর জেলা থেকে জ্যোতিকা কলিতা নামের জনৈক মহিলাকে পাকিস্তানি অপারেটিভস, বিদেশী লেনদেন এবং দুবাইয়ে একজন পাকিস্তানি নাগরিকের সঙ্গে কথিত বিয়ের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত মহিলার বিরুদ্ধে একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিদেশী-সংযুক্ত আর্থিক লেনদেনের তথ্য উদ্ঘাটন হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তিনি জানান, এই মামলায় জ্যোতিকার ভাই জিতু কলিতা সহ আরও চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ অফিসার হরিচরণ ভূমিজ জানান, জ্যোতিকা কলিতা প্রায়ই ব্যবসার নামে দুবাই যেতেন। সেখানে তিনি একজন পাকিস্তানি নাগরিক রমজান মুহাম্মদকে বিয়ে করেছিলেন বলে তার পরিবারও স্বীকার করেছে।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস