টিংখঙে মহিলা উপভোক্তাদের হাতে ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা উদ্যামিতা অভিযান’-এর চেক প্রদান মুখ্যমন্ত্রীর
- ক্রীড়া পরিকাঠামোয় নতুন সংযোজন, মরানে ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে বৃহৎ বাজার কমপ্লেক্স - মরানে অভয়পুর গ্রামীণ ক্রীড়া কমপ্লেক্স উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রীর - ডিব্রুগড় জেলার উন্নয়নে একাধিক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ডিব্রুগড় (অসম), ১৭ ডি
সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা


মুখ্যমন্ত্রী মহিলা উদ্যামিতা অভিযান-এর চেক প্রদান মুখ্যমন্ত্রীর


বোতাম টিপে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস মুখ্যমন্ত্রীর


- ক্রীড়া পরিকাঠামোয় নতুন সংযোজন, মরানে ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে বৃহৎ বাজার কমপ্লেক্স

- মরানে অভয়পুর গ্রামীণ ক্রীড়া কমপ্লেক্স উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রীর

- ডিব্রুগড় জেলার উন্নয়নে একাধিক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

ডিব্রুগড় (অসম), ১৭ ডিসেম্বর (হি.স.) : রাজ্যে নারী ক্ষমতায়নের পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্থাপন করে আজ বুধবার মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা মরানের অভয়পুর গ্রামীণ ক্রীড়া কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে টিংখং বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা উদ্যামিতা অভিযান’ (এমএমইউএ)-এর অধীনে ২৩,৭৯১ জন মহিলা উপভোক্তার হাতে প্রত্যেককে মূলধন হিসেবে প্রথম কিস্তির ১০ হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছেন।

এছাড়া ডিব্রুগড় জেলার সার্বিক উন্নয়নের প্রতি রাজ্য সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা ১২.৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মরানের অভয়পুর গ্রামীণ ক্রীড়া কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। পাশাপাশি তিনি আরও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। প্রকল্পগুলি যথাক্রমে ৩৬.৯২ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষে মরান নিতাই সড়কের মরান টাউন ক্লাব থেকে গাজপুরিয়া লুকুমারি পর্যন্ত ৯.৩ কিলোমিটার অংশের উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ (অসম মালা ৩.০ প্রকল্পের অধীনে); ব্যয় ১৯.৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে টিংখং কো-ডিস্ট্রিক্ট কমিশনারের কার্যালয় ভবন নির্মাণ এবং ২.১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মৈত্রী প্রকল্পের আওতায় মরান থানা ভবন নির্মাণ।

মরানে অবস্থিত অভয়পুর গ্রামীণ ক্রীড়া কমপ্লেক্সটি অসমের ক্রীড়া পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে একটি নতুন সংযোজন, যা তৃণমূল স্তরে ক্রীড়া প্রতিভা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা উদ্যামিতা অভিযান’-এর অধীনে প্রদত্ত ১০ হাজার টাকার মূলধন উদ্যোগী মহিলাদের জন্য কেবল একটি সূচনা মাত্র। এই অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে তাঁরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে জীবনে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবেন। তিনি জানান, রাজ্য সরকার প্রায় ৪ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ধারাবাহিক সহায়তা দিয়ে আসছে, যেগুলির সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৪০ লক্ষ মহিলা। এই গোষ্ঠীগুলিকে ইতিমধ্যে প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে রিভলভিং ফান্ড দেওয়া হয়েছে। সরকারের এই সহায়তা এবং পরবর্তী ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে বহু স্বনির্ভর গোষ্ঠী তাদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে এবং অসমে স্বনির্ভর গোষ্ঠী আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করেছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি ব্যাংক থেকে মোট ১৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ গ্রহণ করেছে। গোষ্ঠীগুলিকে সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি সরকার পৃথক সদস্যদেরও সরাসরি সহায়তা প্রদানের পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা উদ্যামিতা অভিযান’ প্রকল্পের অধীনে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রত্যেক সদস্যকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, এর জন্য প্রায় চার (৪) হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন।

গত লোকসভা নির্বাচনের সময় এই মিশনের ঘোষণা করা হয়েছিল উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিরোধীরা একে ভোটকেন্দ্রিক পদক্ষেপ বলে সমালোচনা করেছিল। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, যদি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ৪০ লক্ষ মহিলা স্বনির্ভর উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন, তবে তা রাজ্যের অর্থনীতিতে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অসমে শূকরের মাংসের বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় উৎপাদন চাহিদার ২০ শতাংশেরও কম। ফলে রাজ্যের বাইরে থেকে বড় মাত্রায় আমদানি করতে হয়। একইভাবে, দৈনিক প্রায় ৫০ লক্ষ ডিমের চাহিদার বিপরীতে অসমে দৈনিক উৎপাদন হয় ১০ লক্ষেরও কম। ব্রয়লার মুরগি সহ বহু খাদ্যপণ্য অন্যান্য রাজ্য থেকে বিশাল পরিমাণে আমদানি করা হয়।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমবায় ব্যবস্থার মাধ্যমে অসমে দৈনিক প্রায় ৩ লক্ষ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। অথচ গুজরাটের মহিলারা দৈনিক প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ লিটার এবং কর্ণাটকে প্রায় ৮০ লক্ষ লিটার দুধ উৎপাদন করেন। এর ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা অসমের বাইরে চলে যাচ্ছে। যদি এই অর্থ রাজ্যের মধ্যেই থাকত, তবে তা স্থানীয় অর্থনীতিকে অনেক বেশি শক্তিশালী করত।

ড. শর্মা বলেন, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ৪০ লক্ষ মহিলা যদি পোল্ট্রি চাষের মাধ্যমে প্রতিদিন মাত্র দুই (২) টাকার ডিম উৎপাদন ও বিক্রি করেন, তবে প্রতিদিন বাজারে ৪০ লক্ষ ডিম সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, এই সকল মহিলা যদি শূকর পালন, হাঁস পালন, ব্রয়লার চাষ ও দুগ্ধ খামারের মতো কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন, তা-হলে রাজ্যের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

তিনি জানান, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে (এমএসপি) ধান ও সরিষা ক্রয়ের সরকারের সিদ্ধান্তে কৃষকরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছেন। এছাড়া রাজ্যের আলু চাষিরাও এখন তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য বাজার খুঁজে পেয়েছেন।

ডিব্রুগড় জেলায় দৈনিক ২ থেকে ২.৫ লক্ষ লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি দুধ প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপনের প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে এখন কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য একটি বাজার তৈরি হয়েছে, যেখানে সরকার নানা উপায়ে সহায়তা প্রদান করছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ৪০ লক্ষ সদস্যকে ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা প্রদান করে আমরা প্রত্যেককে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা উদ্যামিতা অভিযান’-এর মূল লক্ষ্য হলো ‘লাখপতি বাইদেউ’ (লাখপতি দিদি) সৃষ্টি করা।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, টিংখং বিধানসভা কেন্দ্রের বহু মহিলা ইতিমধ্যেই নিজেদের ‘লাখপতি বাইদেউ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, খোয়াং উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত বেজরচুক বেঙ্গলি গ্রামের দুয়ারি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য স্মিতা ফুকন গগৈ ‘আখাল’ ব্র্যান্ডের নামে আচার উৎপাদন ও বিপণনের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ২২ হাজার টাকা আয় করছেন। একইভাবে, টিংখং উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত ২ নম্বর কেন্দুগুড়ি গ্রামের কৃষ্ণচূড়া স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য রুমি দত্ত কলিতা তাঁর ১০ বিঘা জমিতে মরশুমি সবজি চাষ করে প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা এবং বছরে প্রায় ২.৪০ লক্ষ টাকা আয় করছেন। তিনি বলেন, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য মহিলারাও এভাবে ‘লাখপতি বাইদেউ’ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন।

ড. হিমন্তবিশ্ব জানান, এখন পর্যন্ত ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা উদ্যামিতা অভিযান’ প্রকল্পের অধীনে প্রায় ১২ লক্ষ মহিলা প্রথম কিস্তির মূলধন পেয়েছেন। তিনি তাঁদের এই অর্থ বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে পরবর্তী ধাপে তাঁরা ২৫ হাজার এবং ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা পেতে সক্ষম হবেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নারী উদ্যোগপতিত্বকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি রাজ্য সরকার আরও একাধিক জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। টিংখং বিধানসভা কেন্দ্রে অরুণোদয় প্রকল্পের আওতায় ২৯,৬৯৫ জন মহিলা উপকৃত হচ্ছেন, নিযুত মইনা প্রকল্পের মাধ্যমে ২,০৩৪ জন ছাত্রী সুবিধা পাচ্ছে এবং ৫১,৬২৪টি রেশন কার্ডের মাধ্যমে প্রায় ১.৫০ লক্ষ মানুষ প্রতি কেজি ১১৭ টাকায় চালের সঙ্গে ডাল, চিনি ও লবণ পাচ্ছেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা অসমের মানুষের জীবনে এক আমূল পরিবর্তন এনেছি। দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্পের পাশাপাশি সরকার উন্নয়ন ও পরিবর্তনের এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। গত পাঁচ বছরে সরকার একের পর এক বহু অসম্ভব বলে মনে হওয়া কাজ সম্ভব করে তুলেছে।

আগামী ২০ এবং ২১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রস্তাবিত অসম সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নামরূপে নবনির্মিত অ্যামোনিয়া-ইউরিয়া প্রকল্প বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

আজকের অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সব অন্য বহুজনের সঙ্গে ছিলেন জলসম্পদ মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী বিমল বরা, আদিবাসী ও উপজাতি বিশ্বাস ও সংস্কৃতি মন্ত্রী যোগেন মোহন, বিদ্যুৎ মন্ত্রী প্রশান্ত ফুকন, বিধায়ক চক্রধর গগৈ, বিনোদ হাজরিকা, রূপজ্যোতি কুর্মি, সনোয়াল কছারি স্বায়ত্তশাসিত পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য টঙ্কেশ্বর সনোয়াল, দেউরি স্বায়ত্তশাসিত পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য ভৈরব দেউরি, ডিব্রুগড় জেলা পরিষদের সভানেত্রী পুষ্পাঞ্জলি সনোয়াল, অসম রাজ্য গ্রামীণ জীবিকা মিশনের মিশন ডিরেক্টর কুন্তলমণি শর্মা বড়দলৈ প্ৰমুখ।

হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস




 

 rajesh pande