
ইমফল, ১৭ ডিসেম্বর (হি.স.) : মানি লন্ডারিং মামলায় স্বঘোষিত ‘মণিপুর স্টেট কাউন্সিল’-এর একাধিক নেতার ডেরায় হানা দিয়েছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর আধিকারিকরা।
আজ বুধবার মণিপুরের একাধিক স্থানে তালাশি অভিযান চালিয়েছে ইডি। সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও অবৈধ তহবিল সংগ্রহ সংক্রান্ত মানি লন্ডারিং তদন্তের অংশ হিসেবে এই অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইডি-আধিকারিকরা।
জানা গেছে, আজ ইমফলে অন্তত পাঁচটি স্থানে তালাশি চালানো হয়েছে। এই মামলা তথাকথিত ‘মণিপুর স্টেট কাউন্সিল’-এর স্বঘোষিত মুখ্যমন্ত্রী ইয়ামবেম বীরেন এবং কাউন্সিল-এর স্বঘোষিত বহির্বিষয়ক ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী নারেংবাম সমরজিতের বিরুদ্ধে রুজু হয়েছিল।
ইডি সূত্রে জানা গেছে, এই দু’জন সালাই গ্রুপ অব কোম্পানিজ-এর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক বিনিয়োগ প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, এই অর্থ ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা সহ দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছে।
এই মামলার সূত্রপাত ২০১৯ সালে লন্ডনে আয়োজিত একটি সাংবাদিক সম্মেলন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। লন্ডনে বীরেন এবং সমরজিৎ ‘ভারত যুক্তরাষ্ট্ৰ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মণিপুরের স্বাধীনতা ঘোষণা’ করেছিলেন। ইডি-র দাবি, এটি রাষ্ট্রদ্রোহ, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্বেষ ও অশান্তি উসকে দেওয়া এবং দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কার্যকলাপের শামিল।
এর আগে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) এই দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। ইডির বক্তব্য, বীরেন এবং সমরজিৎ প্রথমে ২০০৩ সালের মে মাসে ‘কাদাংব্যান্ড স্বজলধারা ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি’ গঠন করেন, যা পরে ২০০৮ সালের আগস্টে ‘স্মার্ট সোসাইটি’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীতে তাঁরা ‘সালাই ফিনানশিয়াল সার্ভিস’ (স্যাফিন্স) প্রতিষ্ঠা করেন, যার নথিভুক্ত কার্যালয় ইমফলের সাগোলব্যান্ড তেরা লৌক্রাকপাম লেইকাই এলাকায় অবস্থিত।
সংস্থার অভিযোগ, স্মার্ট সোসাইটি বেআইনিভাবে একটি নন-ব্যাংকি ফিনানশিয়াল কোম্পানি (এনবিএফসি) হিসেবে কাজ করত। সদস্যপদ ফি-র নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নগদে আমানত সংগ্রহ করা হতো এবং নগদেই মুনাফা দেওয়া হতো। ইডির দাবি, বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করতে অত্যধিক সুদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
ইডি-র বিবৃতি অনুযায়ী, ‘বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সহজ-সরল বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মোট ৫৭.৩৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয় এবং সেই অর্থ সালাই গ্রুপ অব কোম্পানিজ, স্মার্ট সোসাইটি ও তাদের পরিচালকদের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়।’
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এই অর্থ অপরাধলব্ধ আয় এবং তা রাষ্ট্রদ্রোহ, বিদ্বেষ উসকে দেওয়া ও ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মতো কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছে।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস