
ডিফু (অসম), ২২ ডিসেম্বর (হি.স.) : মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার নির্দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা চালাতে কারবি আংলং ছুটে গেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. রণোজ পেগু এবং রাজ্যের মুখ্যসচিব ড. রবি কোটা। তাঁরা কারবি আংলঙের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার পাশাপাশি উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আলোচনায় বসতে আন্দোলনকারীদের আহ্বান জানিয়েছেন।
সংরক্ষিত চারণভূমি থেকে কথিত অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের উচ্ছেদের দাবিতে পশ্চিম কারবি আংলঙে আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার বিকাল প্রায় ৫:৪০ মিনিট নাগাদ পশ্চিম কারবি আংলঙে ‘অ-উপজাতি’ নাগরিকদের বসতবাড়ি ও দোকানঘর এবং ডংকামোকামে ‘কারবি আংলং স্বশাসিত পরিষদ’-এর মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য (সিইএম) ড. তুলিরাম রংহাঙের বাসভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জেলার পরিস্থিতি অবনতির দিতে চলে যায়।
তবে প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপে আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পুলিশ এবং সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর জওয়ানরা জমায়েতকে ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিচার্জ করে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ায় গুলি চালতে হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে। এতে তিনজন বিক্ষোভকারী এবং একজন সিআরপিএফ জওয়ান আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
মূলত, অনির্দিষ্টকালের অনশনরত জনজাতিভুক্ত প্রতিবাদকারীদের সরিয়ে দেওয়ার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর জেরে খেরনিতে সড়ক অবরোধের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
সহিংস ঘটনার সূত্রপাত হয় আজ ভোরবেলায়, যখন খেরনি থানার অধীন ফেলাংপি এলাকায় অনশনরতদের সরিয়ে দেয় প্রশাসন। কারবি এবং অন্যান্য জনজাতি সম্প্রদায়ের সদস্যদের সমন্বয়ে সংগঠিত আঞ্চলিক দল ‘অল পাৰ্টি হিল লিডার কনফারেন্স’-এর প্রতিবাদকারীরা ভিলেজ গ্রেজিং রিজার্ভ (ভিজিআর) এবং প্রফেশনাল গ্রেজিং রিজার্ভ (পিজিআর) এলাকার সংরক্ষিত ভূমিতে কথিত অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদ করার দাবিতে গত প্ৰায় পনেরোদিন ধরে অনশন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদী আন্দোলন করছিলেন।
আন্দোলনকারীরা সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলের অধীনে বিদ্যমান সুরক্ষার প্রসঙ্গে দাবি করেন, সংরক্ষিত উপজাতীয় জমিতে অনুপ্রবেশ ঘটছে। উচ্ছেদ অভিযানের দাবিতে মহিলা, প্রবীণ, যুবক ও শিক্ষার্থী সহ হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে থং নকবে নামে খেরনি সেতু অবরোধ করেন। ফলে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীরা সড়কের ওপর বসে স্লোগান দেন এবং কারবি আংলং স্বশাসিত পরিষদ (কেএএসি)-এর মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য (সিইএম) ড. তুলিরাম রংহাঙের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার দাবি জানান।
প্রথম দিকে অবরোধ কৰ্মসূচি শান্তিপূর্ণ থাকলেও, কয়েকঘণ্টা পর খেরনির নেপালি বস্তি ও সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সূত্রপাত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, আন্দোলনকারীরা ‘অ-উপজাতি’ নাগরিকদের বাড়ির সীমানা বেড়া ভেঙে, একাধিক দোকান ও বসবাড়িতে আগুন ধরিয়েছে, একটি স্কুলবাসে ভাঙচুর করে এবং জনসাধারণের জরুরি ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত একটি অ্যাম্বুলেন্স সহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
দুপুরের পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যখন শোনা যায় যে বিক্ষোভকারীরা ডংকামোকামে ‘কারবি আংলং স্বশাসিত পরিষদ’-এর মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য ড. তুলিরাম রংহাঙের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করেছে। পরিষদ-প্রধানের বাসভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকা দেখা দেয়। ফলে জেলায় সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পর পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিব ড. রবি কোটা আক্রান্ত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেছেন। তিনি নিরাপত্তা ব্যবস্থার খোঁজখবর নিয়ে জেলার সাধারণ এবং পুলিশ প্রশাসনকে শান্তি ও সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। আধিকারিক সূত্রে জানা গেছে, সংকট প্রশমিত করতে আন্দোলনকারী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে আলোচনার পথ খোঁজার চেষ্টা চলছে।
পশ্চিম কারবি আংলঙে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলার মধ্যেই রাজ্য প্রশাসন সব পক্ষকে শান্ত থাকা এবং হিংসা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, উদ্বেগ ও অভিযোগগুলি আলোচনা এবং সাংবিধানিক পদ্ধতির মাধ্যমে সমাধান করা হবে।
সূত্রের খবর, ভূমি অধিকারের প্রশ্ন এবং পিজিআর ও ভিজিআর জমিতে কথিত অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত মূল অভিযোগগুলি এখনও মীমাংসা না হওয়ায় প্রতিবাদ ও সংশ্লিষ্ট ঘটনা অব্যাহত থাকতে পারে। এই ঘটনাবলি আবারও ষষ্ঠ তফশিলভুক্ত এলাকাগুলিতে জনজাতিদের ভূমি ও পরিচয় রক্ষাকে ঘিরে দীর্ঘদিনের গভীর উত্তেজনাকে সামনে এনেছে।
হিন্দুস্থান সমাচার / বিশাখা দেব