

নদীভাঙন রোধ, জলনিরাপত্তা ও পুলিশ আউটপোস্ট আধুনিকীকরণে একাধিক প্রকল্পের কাজ শুরু কাছাড় জেলায়
শিলচর (অসম), ২২ ডিসেম্বর (হি.স.) : অসমের জলসম্পদ মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা সোমবার কাছাড় জেলায় নবতর পরিকাঠামো উন্নয়নের সুচনা করেছেন। নদীভাঙন প্রতিরোধ, নগর জলসরবরাহ সুরক্ষা এবং পুলিশ পরিকাঠামো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে একাধিক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। দিনব্যাপী এই কর্মসূচি বিজ্ঞানভিত্তিক বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জনমুখী শাসনের ওপর রাজ্য সরকারের অগ্রাধিকারের প্রতিফলন ঘটায়। মন্ত্রী হাজরিকা বারবার ঘোষণা নয়, বাস্তব ফলাফলের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
লক্ষ্মীপুরে মন্ত্রী বরাক নদীর বাম তীরে বিন্নাকান্দি পার্ট-২ ও সংলগ্ন এলাকাকে রক্ষা করতে ৪০০ কোটি টাকার একটি নদীভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের সূচনা করেন। এ-টাইপ জিও ব্যাগ, পর্কুপাইন এবং জিওসিন্থেটিক ফ্যাব্রিক শিট ব্যবহার করে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া এই প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে বারবার ভাঙনের কবলে পড়া লক্ষ্মীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিস্তীর্ণ এলাকাকে সুরক্ষা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিন মন্ত্রী কৌশিক রায়ের উপস্থিতিতে সভায় বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে মন্ত্রী হাজরিকা বলেন, সরকার বন্যা ও নদীভাঙন ব্যবস্থাপনায় একটি সুসংগঠিত, বৈজ্ঞানিক ও মিশন-মোড পদ্ধতি গ্রহণ করেছে, যার বাস্তব সুফল ইতিমধ্যেই মাটিতে দেখা যাচ্ছে।
অতীতের সঙ্গে তীব্র তুলনা টেনে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর প্রায় সাত দশকে যেখানে আনুমানিক ৪,৫০০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল, সেখানে গত সাড়ে চার বছরে প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার বাঁধ নির্মিত হয়েছে। আরও উল্লেখযোগ্যভাবে, যেখানে একসময় বার্ষিক বাঁধ ভাঙনের সংখ্যা ৪০ থেকে ৬০-এর মধ্যে থাকত এবং কখনও কখনও ১০০ ছাড়িয়ে যেত, সেখানে গত চার বছরে তা কমে মাত্র দুই থেকে পাঁচে নেমে এসেছে। তিনি একে উন্নত পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নের স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন। সরকার নদীবিধ্বস্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জীবন, ভূমি ও জীবিকা রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী সমাধানে অটল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে তিনি জানান।
মন্ত্রী জননিরাপত্তার ক্ষেত্রেও উন্নয়নের পরিসর বিস্তৃত করে ‘মিশন ফর অভারঅল ইমপ্রুভমেন্ট অব থানা ফর রেপনসিভ ইমেজ’ (মৈত্রী) প্রকল্পের অধীনে কচুদরম ও সোনাইয়ে নতুন পুলিশ থানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মন্ত্রী কৌশিক রায়, সাংসদ পারিমল শুক্লবৈদ্য এবং বিধায়ক নিহার রঞ্জন দাস ও করিম উদ্দিন বড়ভুইয়াঁর উপস্থিতিতে মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা বলেন, আধুনিক ও নাগরিকবান্ধব পুলিশ পরিকাঠামোই সাড়া-দেওয়া প্রশাসন ও কার্যকর পরিষেবা প্রদানের মূল ভিত্তি।
নগর এলাকার স্থিতিস্থাপকতা আরও বাড়াতে মন্ত্রী হাজরিকা উত্তরকৃষ্ণপুর পার্ট-২-তে অবস্থিত ‘আমরুত’ জলগ্রহণ কেন্দ্রকে রক্ষার জন্য ২.২০ কোটি টাকার একটি নদীভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। শিলচরের পানীয় জল সরবরাহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাটি নদীর হুমকি থেকে সুরক্ষিত রেখে নিরবচ্ছিন্ন জল পরিষেবা নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দিনভরের উদ্যোগগুলির সারসংক্ষেপ টেনে মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার গতিশীল নেতৃত্বে অসম দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলেছে স্থিতিস্থাপক পরিকাঠামো, নিরাপদ সমাজ ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের পথে।
হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস