ফের জটিল অপারেশন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে
ক্যানিং, ২৪ ডিসেম্বর ( হি. স.): আরও একবার জটিল অস্ত্র প্রচার করে সফল হলেন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগের চিকিৎসকরা। মৃতপ্রায় অবস্থায় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে আসা এক প্রসূতি মাকে দ্রুত চিকিৎসা ও অস্ত্রপ্রচার করে প্রসব করানোর পাশাপাশি তাঁক
ফের জটিল অপারেশন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে


ক্যানিং, ২৪ ডিসেম্বর ( হি. স.): আরও একবার জটিল অস্ত্র প্রচার করে সফল হলেন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগের চিকিৎসকরা। মৃতপ্রায় অবস্থায় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে আসা এক প্রসূতি মাকে দ্রুত চিকিৎসা ও অস্ত্রপ্রচার করে প্রসব করানোর পাশাপাশি তাঁকে সুস্থ করে তুলেছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। সুস্থ রয়েছে সদ্যজাত শিশুটিও।

বাসন্তীর ঢুঁড়ি এলাকার তালদা চরপাড়ার বাসিন্দা ফরিদা মোল্লার প্রসব বেদনা ওঠে বিগত শুক্রবার। টোটোয় চাপিয়ে তাঁকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে উদ্দেশ্যে নিয়ে আসছিলেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু রাস্তাতেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে জ্ঞান হারান ফরিদা। পরিবারের সদস্যরা কাছাকাছি একটি নার্সিং হোমে নিয়ে যান তাঁকে। কিন্তু রোগীর অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তাঁকে চিকিৎসা না করেই ক্যানিং হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন নার্সিংহোমের চিকিৎসকরা।

যখন মাতৃমা বিভাগে তাঁকে নিয়ে আসা হয়, তখন কার্যত নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন ফরিদা। সারা শরীর ফ্যাঁকাসে হয়ে যায়। হৃদস্পন্দন থেকে শুরু করে রক্তচাপের কোনও কিছুই ঠাওর করা যাচ্ছিল না বলেই দাবি চিকিৎসকদের। তাঁরা অনুমান করেন ওই মহিলার জরায়ু ফেটে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হয়েছে। দ্রুত অপারেশান না করলে গর্ভস্থ সন্তান ও মা দুজনেরই প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত ফরিদার অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক শ্রুতর্ষী মণ্ডল ও দিব্যাঙ্গনা মিত্র। দ্রুত অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত করেন কর্তব্যরত নার্সরা। দীর্ঘক্ষণের প্রচেষ্টায় সফল প্রসব হয় ফরিদার। কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থার এতটাই অবনতি হয় যে তাঁকে বাঁচাতে জরায়ু বাদ দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না বলেই দাবি চিকিৎসকদের। দ্রুত নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সেই মোতাবেক অপারেশান করা হয় ফরিদার। দুটি অপারেশনই সফল হয়। মা ও সন্তান দুজনকেই আই সি ইউতে রাখা হয়। এদিকে সদ্যজাতর কিছুটা শারীরিক সমস্যা হওয়ায় তাঁকে এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ রয়েছেন। বুধবার ফরিদাকে ছুটি দেওয়া হয় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল থেকে। ফরিদা বলেন, “ বেঁচে ফিরবো ভাবতে পারিনি। ডাক্তারবাবুরা ওভাবে আমার চিকিৎসা না করলে আমি ও আমার সন্তান দুজনেই মারা যেতাম। সরকারি হাসপাতালেও যে এভাবে রোগীদের বাঁচানোর জন্য ডাক্তারবাবু, নার্সরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লড়াই করতে পারেন তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।” শল্য চিকিৎসক দিব্যাঙ্গনা বলেন, “এটা পুরটাই আমাদের দলগত পরিশ্রমের ফল। সেই সময় হাসপাতালে আমাদের গোটা ইউনিট একটা দল হিসেবে কাজ করেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।” স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শ্রুতর্ষী বলেন, “ যে অবস্থায় রোগী আমাদের কাছে এসেছিল, তাতে আমাদের কাছে অন্য কোনও উপায় ছিল না। রোগীকে স্থানান্তর করে দিলে রাস্তাতেই মারা যেত। তাই আমারা দ্রুত আলোচনা করি ও তাঁর অপারেশানের সিদ্ধান্ত নিই। সর্বোপরি আমরা যে আশঙ্কা করেছিলাম রোগীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে, সেই মোতাবেক সিস্টার নার্স, অ্যানাস্থেসিয়া সকলে সাপোর্ট করেছেন। তাই রোগীকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠাতে পারছি।” ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সদের এই যৌথ লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন হাসপাতাল সুপার পার্থ সারথি কয়াল।

---------------

হিন্দুস্থান সমাচার / পার্সতি সাহা




 

 rajesh pande