
দুর্গাপুর, ২৫ ডিসেম্বর (হি.স.) : দেরিতে হলেও জাঁকিয়ে পড়েছে শীত। আর বড়দিনের ছুটিতে শীত উপভোগ করতে পিকনিকপ্রেমীদের ভিড়ে উপচে পড়ল পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লকের দেউল এলাকা। সবুজে ঘেরা অরণ্য, নদীর পাড়, পার্ক ও হরিণ উদ্যান—সব মিলিয়ে মনোরম পরিবেশে বড়দিনে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে দেউল পার্ক।
কাঁকসার জঙ্গলমহল বলতে শিবপুর, মলানদীঘি ও বনকাটি অঞ্চল নিয়ে প্রায় ৭,৫০০ হেক্টর বিস্তৃত বনাঞ্চলকে বোঝায়। শাল, মহুয়া, আম, জাম, কাঁঠাল, সেগুন, শিমুল, নিম-সহ নানা প্রজাতির গাছে ঘেরা এই অরণ্যে রয়েছে হরিণ উদ্যান, ময়ূর ও বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাস। মাঝেমধ্যে হাতিরও দেখা মেলে।
পর্যটন বিকাশের লক্ষ্যে পূর্ব বর্ধমান আঞ্চলিক বনবিভাগ শিবপুর থেকে দেউল পর্যন্ত জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ট্রেকিং রুট তৈরি করেছে। একসময়ের লাল মোরামের রাস্তার জায়গায় এখন প্রেভার ব্লকের পথ। জঙ্গলের ভিতরে একাধিক জলাশয়ে শীতকালে পরিযায়ী পাখির আগমন পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়িয়েছে।
দেউল পার্ক সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ঐতিহাসিক শ্যামরূপা মন্দির, যা সেন বংশের আমলে প্রতিষ্ঠিত বলে জানা যায়। অজয় নদীর তীরে অবস্থিত দেউল পার্কে রয়েছে প্রাচীন শিবমন্দির, বোটিং সুবিধা, টয় ট্রেন, ফুলের বাগান ও হরিণ বাটিকা। প্রায় ২৮ হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত এই হরিণ উদ্যানে রয়েছে শতাধিক চিতল হরিণ, পাশাপাশি ময়ূর, টিয়া, বনবিড়াল, বনমোরগের মুক্ত বিচরণক্ষেত্র।
চলতি বছর শীত দেরিতে এলেও ঠান্ডার প্রকোপ কম নয়। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বর্ধমানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ছিল। বড়দিনের সকালে ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডার মধ্যেও অজয় নদীর দেউলে পিকনিকপ্রেমীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে পরিবার ও স্কুল পড়ুয়ারা এখানে বনভোজন করতে আসেন।
পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে একাধিক কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে বনবিভাগ। দুর্গাপুর রেঞ্জের আধিকারিক সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, জঙ্গলে ডিজে বাজানো ও আগুন জ্বালানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শব্দ ও পরিবেশ দূষণ রোধে থার্মোকলের থালা-বাটি ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। পরিবর্তে শালপাতার ব্যবহারে জোর দেওয়া হচ্ছে, যা স্থানীয় আদিবাসী পরিবারগুলির আয়ের উৎস বাড়াবে।
দেউল পার্ক পরিচালনায় যুক্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রতিনিধি সোমনাথ হাজরা জানান, পার্কের ভিতরে মদ্যপান, প্লাস্টিক ও থার্মোকল ব্যবহার নিষিদ্ধ। নিয়ম মানাতে সতর্কতামূলক ফেস্টুন, সিসিটিভি ও নিয়মিত মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে, শীতের মরশুমে প্রকৃতি উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তা দিতেই সচেষ্ট প্রশাসন ও স্থানীয়রা।
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / জয়দেব লাহা