সোনামুড়ার অনুমোদনহীন নেশামুক্তি কেন্দ্রে নির্মম নির্যাতন, প্রশাসনের অভিযানে ফাঁস চাঞ্চল্যকর তথ্য
সোনামুড়া (ত্রিপুরা), ২৫ ডিসেম্বর (হি.স.) : সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একাধিক নির্যাতনের ভিডিওর সূত্র ধরে সিপাহীজলা জেলার সোনামুড়ার একটি অনুমোদনহীন নেশা মুক্তি কেন্দ্র তথা পুনর্বাসন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার বড়সড় অভিযান চালায় পুলিশ, সাধারণ প্রশা
ত্রিপুরা পুলিশ


সোনামুড়া (ত্রিপুরা), ২৫ ডিসেম্বর (হি.স.) : সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একাধিক নির্যাতনের ভিডিওর সূত্র ধরে সিপাহীজলা জেলার সোনামুড়ার একটি অনুমোদনহীন নেশা মুক্তি কেন্দ্র তথা পুনর্বাসন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার বড়সড় অভিযান চালায় পুলিশ, সাধারণ প্রশাসন এবং সোনামুড়া নগর পঞ্চায়েতের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রশাসনিক দল। অভিযানে উঠে আসে মানবিকতার পরিপন্থী নির্মম শারীরিক নির্যাতনের চিত্র এবং অনুমোদনহীনভাবে কেন্দ্রটি পরিচালনার ঘটনা।

ঘটনার সূত্রপাত বুধবার, যখন কেন্দ্রটির এক প্রাক্তন আবাসিক সোনামুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে জানান যে, নতুন আবাসিকদের ওপর ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। অভিযোগে তিনি বলেন, “রোগীদের মধ্যে মাদকাসক্তির লক্ষণ দেখা দিলেই বেধড়ক মারধর করা হয়। লাঠি দিয়ে যেভাবে মারধর করত, তা জীবনের সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা।” অভিযোগের পরপরই আবাসিকদের লাঠিপেটার একাধিক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। আরেকটি ভিডিওতে ওই কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষকে একজন আবাসিককে চড় মারতে দেখা যায়।

অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন অভিযান চালালে জানা যায়, পুনর্বাসন কেন্দ্রটি স্থানীয় প্রশাসনের কোনও অনুমোদন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছিল। সোনামুড়া নগর পঞ্চায়েতের এক কর্মকর্তা জানান, “নগর পঞ্চায়েত বা মহকুমা প্রশাসনের কেউই কেন্দ্রটির অস্তিত্ব সম্পর্কে জানত না। ভবন মালিকের সঙ্গে ব্যবস্থাপনার একটি চুক্তি থাকলেও কেন্দ্র পরিচালনাকারী সংস্থা বিশালগড়ের।”

অভিযানে উপস্থিত সোনামুড়া সিএইচসি-এর ডাক্তার ত্রিশঙ্কর দাস জানান, কেন্দ্রটিতে কোনও আবাসিককেই মাদকাসক্তি নিরাময়ের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল না। তাঁর কথায়, “কয়েকজনের শরীরে স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ওষুধপত্র পরীক্ষা করে দেখলাম এখানে মাদকাসক্তদের চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই।”

অভিযানের খবর পেয়ে কেন্দ্রে ছুটে আসা আবাসিকদের অভিভাবরাও গুরুতর অভিযোগ তোলেন। ইব্রাহিম মিয়ার বড় ভাই আবদির মিয়া বলেন, “আমাদের ছোট ভাইকে ১৭ দিন আগে এখানে ভর্তি করা হয়েছিল। গতকাল জানতে পারি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এসে দেখি ভাই নিখোঁজ। অন্য আবাসিকরা জানিয়েছে, গত রাতে যারা মারধরের শিকার হয়েছিল, তাদের পাঁচজনকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।”

অভিযানের সময় উদ্ধার করা প্রায় সব আবাসিকই অভিযোগ করেন, কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কথা বললেই বা একটু প্রতিরোধ করলেই তাদের নির্মমভাবে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় অভিযোগের মূল অভিযুক্ত মান্নান চৌধুরী ও তাঁর সহযোগীরা এখনও পর্যন্ত পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে এবং কেন্দ্রটি কীভাবে অনুমোদন ছাড়া এতদিন পরিচালিত হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

হিন্দুস্থান সমাচার / গোবিন্দ দেবনাথ




 

 rajesh pande