অসমে এখন বাংলাদেশি মুসলমান প্রায় ৪০ শতাংশ, জাতি-মাটি-ভিটে রক্ষায় অসমবাসীকে জোটবদ্ধ হওয়ার ডাক মুখ্যমন্ত্রীর
- ‘বিকাশের পাশাপশি এখন অসমের অস্তিত্ব রক্ষা হবে বিজেপির মূলমন্ত্ৰ’ - ‘রাজ্যের সরকারি ১,৪৫,৩২৭.০৭ বিঘা জমি বাংলাদেশি মুসলমানদের জবরদখল থেকে উদ্ধার’ - ৬০ দিনের মধ্যে ঘোষণা হবে ২০২৬-এর বিধানসভা নিৰ্বাচনের দিন, দলীয় কার্যকর্তাদের জোরকদমে ময়দানে নামার
দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা


দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ


- ‘বিকাশের পাশাপশি এখন অসমের অস্তিত্ব রক্ষা হবে বিজেপির মূলমন্ত্ৰ’

- ‘রাজ্যের সরকারি ১,৪৫,৩২৭.০৭ বিঘা জমি বাংলাদেশি মুসলমানদের জবরদখল থেকে উদ্ধার’

- ৬০ দিনের মধ্যে ঘোষণা হবে ২০২৬-এর বিধানসভা নিৰ্বাচনের দিন, দলীয় কার্যকর্তাদের জোরকদমে ময়দানে নামার আহ্বান হিমন্তবিশ্বের

গুয়াহাটি, ২৭ ডিসেম্বর (হি.স.) : অসমে এখন প্রায় ৪০ শতাংশ মুসলমান বাংলাদেশি বসবাস করছেন। রাজ্যের জনবিন্যাস দ্রুত পরিবৰ্তনে হচ্ছে দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

গুয়াহাটির পাঞ্জাবাড়িতে অবস্থিত শ্রীমন্ত শংকরদেব আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাগৃহে বিজেপির সর্বভারতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি নীতিন নবীনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত প্রদেশ বিজেপির কার্যনির্বাহী সভার দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে কথাগুলি বলেছেন মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা।

অধিবেশনে কেন্দ্ৰীয় মন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল, অসম বিজেপির নিৰ্বাচনী প্রভারী বৈজন্তজয় পাণ্ডা, সহ-প্ৰভারী সুনীল শৰ্মা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমন্বয়ক সম্বিত পাত্ৰ, অসম প্রদেশ প্রভারী হরিশ দ্বিবেদী, কেন্দ্ৰীয় মন্ত্ৰী পবিত্ৰ মাৰ্ঘেরিটা, জাতীয় সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্ৰ রাজুদের উপস্থিতিতে অংশগ্রহণকারী প্রায় এক হাজার কাৰ্যকৰ্তার সামনে বিগত ১০ বছরে রাজ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

রাজ্যের বিভিন্ন প্ৰান্ত থেক আগত এক হাজার পদাধিকারী ও কাৰ্যকৰ্তা সহ সকল সাংসদ ও বিধায়কদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে সম্প্রতিক রজনৈতিক পরিস্থিতি পৰ্যালোচনা করার পাশাপাশি আসন্ন ২০২৬ সালে অনুষ্ঠেয় রাজ্য বিধানসভা নিৰ্বাচনে লড়াই করতে সাংগঠনিক ব্লু-প্ৰিন্ট প্ৰস্তুত করা হয়েছে।

আজকের অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা বলেন, ‘আগে মানুষকে বোঝানো হতো, প্ৰতিবাদ-আন্দোলন না করলে কোনও কিছুই পাওয়া যায় না। কিন্তু বিজেপির অগ্ৰাধিকার দেয় উন্নয়নকে। উন্নয়ন এবং মানুষকে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া বিজেপির উদ্দেশ্য। তাই আজ কোনও আন্দোলন নেই। রাজ্যের চারিদিকে কেবল উন্নয়ন আর উন্নয়ন। রাজ্যের অধিকাংশ জেলায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্ৰহ্মপুত্ৰের ওপর কয়েকটি সেতুর নিৰ্মাণকাজ সম্পূৰ্ণ হয়েছে।’

নিয়োগ সম্পৰ্কে মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, ‘গত বিধানসভা নির্বাচনে দেড় লক্ষ সরকারি চাকরি প্রদানের প্ৰতিশ্ৰুতি দেওয়া হয়েছিল। অথচ গত পাঁচ বছরের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত দু লক্ষ যুবক-যুবতীকে নিযুক্তি দিতে সক্ষম হয়েছে সরকার।’ তিনি বলেন, উন্নয়ন আর অস্তিত্বের সুরক্ষা, দুটি বিষয় সরকারের কাছে সমান গুরুত্বপূৰ্ণ।

প্ৰদেশ কাৰ্যনিৰ্বাহক বৈঠকের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে উদাত্ত ভাষণে দলের নেতা-কার্যকর্তাদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা। বিজেপি সরকারের আমলে বাস্তবায়িত উন্নয়নমূলক কাজগুলি রাজ্যবাসীর ঘরে ঘরে নিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব দিতে আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্ৰী। তিনি বলেন, ‘এখন বিকাশের পাশাপশি অসমের অস্তিত্ব রক্ষা হবে বিজেপির মূলমন্ত্ৰ।’

হিমন্তবিশ্ব বলেন, ‘অসমে খিলঞ্জিয়া (ভূমিপুত্র) মুসলমানদের ছাপিয়ে বাংলাদেশি মুসলমানের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তা উদ্বেগজনক। ২০২৭ সালের আদমশুমারিতে অসমে বাংলাদেশি মুসলমানের হার গিয়ে দাঁড়াবে ৪০ শতাংশ। জাতি, মাটি, ভিটে না থাকলে আমাদের শ্মশানের সাংসদ, বিধায়ক হতে হবে।’

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার জীবনকালে ২১ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাংলাদেশি মুসলমানের সংখ্যা বেড়েছে বলে দেখছি। যখন তাদের সংখ্যা ৪০ শতাংশ হবে, তখন রাজ্যের বিধানসভা আসনের মাধ্যমে সরকার গঠনে তারা নিৰ্ণয়াক হবেন। ধরুন, যদি সে ধরনের কোনও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তা-হলে এই সব লোকদের আনুগত্য ভারত, না-বাংলাদেশের প্রতি থাকবে? যদি তাদের জনসংখ্যা ৫০ শতাংশ অতিক্রম করে, তা-হলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অসমকে বাংলাদেশের অংশ করার চেষ্টা করা হবে! এখনই কংগ্ৰেসের জনৈক মুখপাত্ৰ ৪৮ শতাংশ আসন মুসলমানের জন্য দাবি করছেন।’

ড. শর্মা বলেন, ‘গুয়াহাটিতে আজ আত্মসহায়ক গোষ্ঠীগুলি ব্যবসা করতে আসে না। উবার বা ফ্লাইঅভারের নীচের দোকানগুলিতে গিয়ে তাদের নাম জিজ্ঞেস করলেই বুঝতে পারবেন, তারা অপিরিচত মানুষ। গত পাঁচ বছর ধরে সভ্যতার সংগ্রামে খিলঞ্জিয়া মানুষের সঙ্গে আছে বিজেপি। বিগত দিনে কোনও সরকার ১,৪৫,৩২৭.০৭ বিঘা জমি বাংলাদেশি মুসলমানদের জবরদখল থেকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেনি। কোনও সরকার বিদেশিদের সীমান্ত থেকেই ফেরত পাঠায়নি। তাই অস্তিত্ব রক্ষার এই সংগ্রামে হয় আমরা থাকব, না-হলে তারা থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘গত ৭৫ বছরে অসমিয়াদের নিজস্ব স্থান ছেড়ে আসতে হয়েছিল। আমরা যখন সেই সব স্থানগুলিতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো শুরু করেছি, তখন থেকে তারা স্বউদ্যোগে তল্পিতল্পা গুটিয়ে সরে যেতে থাকে। দিশপুরে অসম সচিবালয়ে আগে দৈনিক প্রায় পাঁচ হাজার অপরিচিত মানুষের যাতায়াত ছিল। এখন একজনও অপরিচিত মানুষকে দেখা যায় না। বিজেপি যখন তৃতীয়বারের মতো রাজ্যে সরকার গঠন করবে বলে এরা বুঝে গেছে, তখন অসমকে অশান্ত করতে অহরহ চেষ্টা করছে একাংশ।’

মুখ্যমন্ত্ৰী ড. শৰ্মা বলেন, ‘সভ্যতার সংগ্রামে বিজেপিই একমাত্ৰ যোদ্ধা। শংকর-মাধবের জায়গায় আজ শংকর-আজান বলে বামপন্থীরা আমাদের মনে ও মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছে। অসমের ইতিহাসে শংকরদেব এবং আজান ফকিরের কখনও বৈঠক হয়েছিল বলে কি উল্লেখ আছে? অসমে শংকর-মাধব আছে, শংকর-আজান নেই। আজান ফকির তাঁর নিজের জায়গায় আছেন।’

‘এছাড়া ইতিহাসে কোথা থেকে বাঘ হাজরিকা আসল, তা আমরা জানি না। লাচিত বড়ফুকনের সঙ্গে বাঘ হাজরিকাকে মিলিয়ে আমাদের যুদ্ধকে দুৰ্বল করতে হবে না। বাঘ হাজরিকা নামের কাল্পনিক একটি চরিত্ৰকে আমদানি করে বলা হচ্ছে, বাঘ হাজরিকা না থাকলে নাকি বীর লাচিত মোঘলকে পরাভূত করতে পারতেন না বলে কৌশলে এক ভ্ৰান্ত ধারণা আমাদের মগজে প্রবেশ করা হয়েছে। শংকরদেবের সঙ্গে আজান ফকিরকে মিলিয়ে আমাদের সংগ্রামকে দুৰ্বল করতে হবে না। বিজেপির জন্য আগামী প্ৰত্যেকটি নিৰ্বাচন হবে সভ্যতার সংগ্রাম।’

তিনি বলেন, ‘যে সকল বাঙালি আমাদের সঙ্গে দুৰ্গা পূজা করেন, তাঁদের আমরা শত্ৰু জ্ঞান করি। অথচ যাঁরা দুৰ্গা পূজা করে না, পালনাম গান না, তাদেরকে বন্ধু বলে ভাবাটা জাতির কাছে ভয়ংকর।’

মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, যে যা-ই করুন না-কেন, এ মুহূর্তে জনবলের নিরিখে বিজেপিকে কেউ-ই পরাজিত করতে পারবে না। অসমের জনতা বিজেপির পাশে আছে। গত পাঁচ বছরে একটি সরকারের যা করতে হয়, যা করেছে এবং করছে, তা সকলেই দেখছেন। কিন্তু তার পরও কতিপয় নানা ষড়যন্ত্ৰের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিপথে পরিচালিত করছে।’

কে মুখ্যমন্ত্ৰী হবেন, কে সাংসদ হবেন, বিধায়ক কে হবেন, এই সব প্ৰশ্ন জাতিকে রক্ষা করতে পারে না বলে মন্তব্য করে ড. শর্মা বলেন, ‘আসন্ন বিধানসভা নিৰ্বাচনে জাতিকে রক্ষা করতে হলে সভ্যতার সংগ্রামে বিজেপিকে নামতে হবে।’ তাই, মন্ত্ৰী, বিধায়ক হওয়ার জন্য রাজনীতি না করার আহ্বান জনিয়েছেন মুখ্যমন্ত্ৰী।

ড. শর্মা ফের বলেন, ‘আজ ৪৮টি আসনের দাবিদার কংগ্ৰেস নেতা নিৰ্বাচনে জয়ী হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্ৰীও তাঁদের সম্প্ৰদায়ের হতে হবে বলে দাবি করতে পারেন। স্বদেশ ও স্বজাতির মঙ্গলের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০২৬-এর নিৰ্বাচনে আমাদের অবতীৰ্ণ হতে হবে। আমরা লড়াই করব এবং নিশ্চিতভাবে জিতব। এই নিৰ্বাচন আশা-আকাঙ্ক্ষার নয়, সমৰ্পণের নিৰ্বাচন। এই নিৰ্বাচন জাতির জন্য লড়াইয়ের নিৰ্বাচন। প্ৰত্যেক সনাতনী, প্ৰত্যেক খিলঞ্জিয়া নিশ্চিতভাবে বিজেপিকে ভোট দেবেন। কারণ অসমিয়া জাতিকে বাঁচিয়ে রাখার রাখার শেষ অবলম্বন বা পথ হচ্ছে বিজেপি।’

প্রসঙ্গত, গতকাল এবং আজ, দুদিনের অধিবেশনে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন, সাংগঠনিক বিস্তার, সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্প এবং সাফল্যগুলি জনতার কাছে নিয়ে যাওয়ার রণনীতি প্রভৃতি নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

নির্বাচনের জন্য হাতে সময় খুব কম। তাই সকল কার্যকর্তাকে উৎসর্গিত মনোভাবে কাজ করার আহ্বান জানান সর্বভারতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি নীতিন নবীন। বুথস্তরে দলকে আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, বুথ শক্তিশালী হলে নির্বাচনে জয়ী হতে কোনও অসুবিধা হবে না। প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রে তৃতীয়বার সরকার গঠনের মতো অসমেও তৃতীয়বার এনডিএ সরকার গঠন হবে বলে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে আশা করছেন।

হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ কুমার দাস




 

 rajesh pande