অশোক সেনগুপ্ত
কলকাতা, ২৫ এপ্রিল (হি.স.): রাজনীতির চাদরের আড়ালে মানবিকতা? না, মানবিকতার চাদরের আড়ালে রাজনীতি? কোন বাক্যটা সঠিক, কে নিশ্চিত করে বলতে পারেন?
ছোট্ট হৃদানকে যেভাবে দুই ওজনদার নেতা কোলে জড়িয়ে ধরেন, যেভাবে অধিকারী পরিবারের সদ্যদের হাত করার চেষ্টা করে যুযূধান দুটি দল, পরিবারের মধ্যে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা হয়, এরকম ঘটনা আমার সাংবাদিকতায় চার দশকেরও বেশি সময়কালে দেখেছি কিনা মনে করতে পারছি না।
পহেলগাঁওয়ে নিহত বিতান অধিকারীর দেহ বুধবার রাতে বিমানে আনা হয়। তৃণমূল, বিজেপি দু’দলেরই ওজনদার অন্তত চার জন করে হাজির ছিলেন সেখানে। কার্গো গেটের বাইরে অগ্নিমিত্রার কোলে প্রথমে ওঠে বিতান-সোহিনীর পুত্র হৃদান। এরপর তাকে কোলে নেন শুভেন্দু অধিকারী। সদ্যবিধবা সোহিনীকে বলেন, ‘‘বলুন আপনি, হিন্দু বলে মেরেছে! কাল রাতে আমায় বলেছেন। হিন্দু বলে মেরেছে।’’ বলেই হৃদানের গালে চুম্বন করেন বিরোধী দলনেতা।
মঙ্গলবার পহেলগাঁওর বৈসরনে অভিশপ্ত ঘটনার পর বিতানের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখা করেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিন বছরের হৃদানকে কোলে আদরের সঙ্গে জড়িয়ে ধরেন অরূপও।
এর পর ঘটে যায় আরও ঘটনা। দফায় দফায় দু‘দলই অধিকারী পরিবারকে বেশি করে কাছে পাওয়ার চেষ্টা করে। কিছুটা এগিয়ে থাকে শুভেন্দুবাবুরা। বৃহস্পতিবার এক্সবার্তায় কুণাল ঘোষ যুক্তি-সহ লেখেন, ক্ষতিপূরণের অর্থ যেন কেবল সোহিনী-হৃদানকে না দিয়ে বয়স্ক বাবা-মাকে দেওয়া হয়।
ব্যাপারটা ওখানেই থেমে থাকেনি। সংবেদনশীল ঘটনাটির সুফল নিতে বিজেপি সোহিনীকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করার পরিকল্পনা করে। তৃণমূলও অন্য অঙ্ক কষে নামায় পরিবারেরই এক ঘনিষ্ঠকে। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তোপ দাগেন বিজেপি-র কেয়া ঘোষ। তিনি উল্লেখ করেন পাহাড়ে ২০১৭ সালে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত এস আই অমিতাভ মালিকের কথা। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল নববধূ স্ত্রী-র। ক্ষতিপূরণ পেয়ে ফের নতুন করে ঘর বেঁধেছেন। অমিতাভর বাবা-মার কথা হারিয়ে গিয়েছে বিস্মৃতির আড়ালে।
প্রসঙ্গত, ১৮ এপ্রিল স্ত্রী সোহিনী ও পুত্রকে নিয়ে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন ফ্লোরিডায় কর্মরত বিতান। তাঁর স্ত্রী সোহিনীও সেখানে বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত। ছুটিতে তাঁরা কলকাতার বাড়িতে ফেরেন। এরপর ১৮ তারিখ তাঁরা কাশ্মীর ঘুরতে যান। বৃহস্পতিবার তাঁদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। তার আগে ঘটে যায় সেই অভিশপ্ত ঘটনা।
সব কিছু দেখে ছোট্ট বাচ্চাটি বুঝে উঠতে পারছে না ঘটনার গুরুত্ব। বোঝার কথাও নয়। মা সোহিনীই তার কাছে সবচেয়ে কাছের। মানবিকতার মুখোশের আড়ালে রাজনীতির মারপ্যাঁচ কে, কতটা খেলতে পারেন, তার চূড়ান্ত ছবিটা বোঝা যাবে ক’মাস বাদে। ছোট্ট শিশুটি কি বড় হয়ে মনে রাখতে পারবে এই দিনগুলোর কথা?
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / অশোক সেনগুপ্ত