“সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনার সঙ্গে চটজলদি পদক্ষেপ”, যুদ্ধে নিদান সেনাপতির
অশোক সেনগুপ্ত কলকাতা, ১০ মে (হি.স.): যুদ্ধজয়ের কোনও প্রথাগত সাফল্যসূত্র হয় না। সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনার সঙ্গে চটজলদি পদক্ষেপের মিশ্রন যুদ্ধে আবশ্যিক বলে মন্তব্য করলেন প্রবীন প্রাক্তন সেনাপতি অরুণ রায়। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ভারতকে সবচেয়ে বড় যুদ্ধে
অরুণ রায়


অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা, ১০ মে (হি.স.): যুদ্ধজয়ের কোনও প্রথাগত সাফল্যসূত্র হয় না। সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনার সঙ্গে চটজলদি পদক্ষেপের মিশ্রন যুদ্ধে আবশ্যিক বলে মন্তব্য করলেন প্রবীন প্রাক্তন সেনাপতি অরুণ রায়।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ভারতকে সবচেয়ে বড় যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয়েছে ১৯৭১-এ। তাতে সবচেয়ে জটিল যুদ্ধক্ষেত্র ছিল পাক সীমান্তের ছাম্ব। ওই সেক্টরে ভারতীয় বাহিনীর ‘8 J& K Militia unit’-এ অরুণবাবু ছিলেন এক্সিকিউটিভ অফিসার (অ্যাডজুটেন্ট)। ২০০৬-এ অবসর নিয়েছেন জিওসি হিসাবে। এখন বয়স ৭৯। তাঁর ৪৪ বছরের সেনাজীবনে সবচেয়ে স্মরণীয় অভিজ্ঞতা ’৭১-এর সেই যুদ্ধকথা।

এই প্রতিবেদককে তিনি জানালেন, “হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মাঝে একবার পাক সেনারা আমাদের পর্যদুস্ত করে বেশ কিছুটা জায়গা দখল করে নিল। আমরা পিছু হঠে মনমরা হয়ে আছি। হঠাৎ এক অবাঙালি সহকর্মী এসে বলল! “রয়, বসে থেকো না। এখনই চলো। আমরা আচমকা ওদের ঘায়েল করি। না হলে দেশে ফিরে আমাদের দুজনকেই রাস্তায় কমলালেবু বিক্রি করতে হবে!”

অরুণবাবু এই প্রতিবেদককে বলেন, “কিন্তু আমাদের সাজানো বহর কোথায়? প্রস্তুতি নেই তো! এটা বলতেই আদতে অমৃতসরের ওই সহযোদ্ধা বললেন, আশপাশে যারা আছেন, যা আছে তাই নিয়েই চলো। বাবুর্চি, সেপাই, লাঠি, ভোঁতা অস্ত্র, এক আধটা আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে আমরা শত্রুশিবিরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। জয়ী পাক শিবিরে ছিল ‘ফাস্ট মাসুদস স্কাউট’-এর যোদ্ধারা। ওরা তখন ভাবতে পারেনি পরাভূতরা এত দ্রুত ফের আঘাত হানতে পারে! ওরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ল।

গুছিয়ে আমাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার অবকাশই পেল না ওরা। হারানো জমি ফের ফেরৎ পেলাম আমরা। তারিখটা এখনও মনে আছে— ১৯৭১-এর ৩ ডিসেম্বর। এই অসমসাহসিকতার জন্য পেয়েছিলাম ‘৭০৭ ব্যাটন অনার’।”

প্রাণ ফেরৎ নিয়ে ওই যুদ্ধে জিতে এসেছিলেন। কিন্তু ওই যুদ্ধে হারিয়েছেন, এমন কোনও কথা এতদিন বাদে মনে পড়ে আপনার? অরুণবাবুর জবাব, “হ্যাঁ, একটা রয়্যাল এনফিল্ড। জম্মুতে এমনিতে যে সেনা-ছাউনিতে থাকতাম সেখান থেকে প্রতি শনিবার বিকেলে ওই বাইকে চড়ে রেস্তোরাঁয় যেতাম। দু’ঘন্টা সময় লাগত। বাইকটা বড় পছন্দের ছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে গিয়েছিলাম। শত্রুদের গুলিতে এক্কেবারে ঝাঁঝড়া হয়ে গিয়েছিল। ওটা আর ব্যবহার করতে পারিনি।”

যুদ্ধ শেষ হয়। বেঁচে ফিরে আসা সৈনিক-সেনাপতিদের অনেকের থেকে যায় অব্যক্ত এরকম নানা স্মৃতি।

---------------

হিন্দুস্থান সমাচার / অশোক সেনগুপ্ত




 

 rajesh pande