গুয়াহাটি, ২৫ মে (হি.স.) : অকলে চলে গেলেন কাছাড়ের অতিরিক্ত জেলাশাসক যুবরাজ বড়ঠাকুর। আজ রবিবার বিকাল সাড়ে চারটায় হায়দরাবাদের এআইজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৪ বছর। মৃত্যুকালে যুবরাজ রেখে গেছেন বাবা দুলেনকুমার বড়ঠাকুর, ভাই দেবরাজ বড়ঠাকুর এবং স্ত্রী আকাঙ্ক্ষা শর্মা বড়ঠাকুরকে।
২০১৫ ব্যাচের আসাম সিভিল সার্ভিসের (এসিএস) প্রশাসনিক আধিকারিক যুবরাজ বড়ঠাকুর ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (আইবিডি) নামের এক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ১৫ মে আইবিডি রোগ ধরা পড়ার পর অতিরিক্ত জেলাশাসক যুবরাজ বরঠাকুরকে নিয়ে হায়দরাবাদের এআইজি হাসপাতালে নিয়ে ভরতি করা হয়। গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটলে ১৭ মে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
তাঁর চিকিৎসক গ্যাস্ট্রো এন্টেরোলজিস্ট ডা. অনিরুদ্ধ প্রতাপ সিংহ জানান, অস্ত্রোপচার জরুরি ছিল, কিন্তু ক্রমাগত জ্বর, অত্যন্ত নিম্ন রক্তচাপ এবং দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে অস্ত্রোপচার সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও গত ২৪ ঘণ্টায় তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে এবং আজ বিকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন যুবরাজ বরঠাকুর।
যুবরাজ বরঠাকুরের মরদেহ আগামীকাল সোমবার তাঁর জন্মভূমি ডিব্রুগড়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পূর্ণ মর্যাদায় তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
যুবরাজ বড়ঠাকুর ২০২২ সাল থেকে কাছাড় জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়া তিনি জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (ডিডিএমএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি অঞ্চলের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বন্যা হোক বা পঞ্চায়েত নির্বাচন, দক্ষ হাতে সব সামলেছেন তিনি।
২০২২ সালের বন্যায় প্রতিটি মানুষ যাতে ভালো থাকে, রেশন সামগ্রী পান সে বিষয়ে বিশেষ নজরদারি ছিল তাঁর। বিশেষ করে সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাত জেগে কর্তব্য পালন করেছেন তিনি। এছাড়া যুব সমাজের উন্নয়নে আয়োজিত বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংস্থার অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন যুবরাজ বড়ঠাকুর।
মিষ্টিভাষী যুবরাজ বড়ঠাকুর ২০১৭ সালে দক্ষিণ শালমারায় সহকারী কমিশনার হিসেবে প্রশাসনিক জীবন শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি নগাঁও এবং দলগাঁওয়ের সার্কল অফিসার এবং হাইলাকান্দি জেলার সাব-ডিভিশনাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দক্ষতা, বিনয় ও আপসহীন নিষ্ঠার জন্য তিনি সহকর্মীদের শ্রদ্ধা ও জনসাধারণের ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন।
প্রশাসনিক দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি সংগীতের একজন অনুরাগী ছিলেন। একজন প্রতিভাবান গায়ক হিসেবে তিনি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন এবং তাঁর মধুর কণ্ঠ ও শিল্পীসুলভ দক্ষতার জন্য প্রশংসিত হতেন।
তাঁর মৃত্যুর খবরে কাছাড় জেলা প্রশাসনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহকর্মী ও কর্মচারীরা এই সহানুভূতিশীল আধিকারিকের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
হিন্দুস্থান সমাচার / মনোজিৎ দাস