হাফলং (অসম), ৩০ জুন (হি.স.) : উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য (সিইএম) দেবোলাল গার্লোসাকে অপসারণের দাবিতে আজ সোমবার বিজেপির তৃণমূলস্তরের কর্মীরা হাফলঙে জেলা কমিশনার কার্যালয় প্রাঙ্গণে ধরনা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
পাহাড়ি জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে বিজেপির তৃণমূলস্তরের কর্মীরা হাতে হাতে থাল ও প্ল্যা-কার্ড নিয়ে ধরনায় বসে দেবোলাল গার্লোসা গো ব্যাক, দেবোলাল গার্লোসা হটাও, বিজেপি বাঁচাও, দেবোলাল গার্লোসার সিন্ডিকেটরাজ ও একনায়কত্ববাদ চলবে না, ইত্যাদি নানা স্লোগানে উত্তাল করে তুলেন জেলা কমিশনার কার্যলয়ের সম্মুখস্থল।
প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ, দেবোলাল গার্লোসা ডিমা হাসাও জেলায় একনায়কত্ববাদ চালিয়েছেন। চাকরি থেকে শুরু করে ঠিকাদারি ও সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প থেকে বিজেপির তৃণমূলস্তরের কর্মী ও সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করছেন। পাহাড়ি জেলায় সিন্ডিকেটরাজ থেকে শুরু করে একের পর এক সরকারি জমি বেদখল করে চলছেন তিনি।
বিজেপির তৃণমূলস্তরের কর্মীরা বলেন, এর আগেও দলের একাংশ বিক্ষুব্ধ নেতা ও কর্মী এভাবে দেবোলাল গার্লোসার একনায়কত্ববাদের অভিযোগ তুলে তাঁর অপসারণ চেয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার কাছে পত্র প্রেরণ করেছিলেন। এর পরও দেবোলালের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি মুখ্যমন্ত্রী, অভিযোগ করেন প্রতিবাদকারীরা।
এদিকে বিজেপি নেতা তথা মাহুর পুর পর্ষদের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অনুপ লাংথাসা সাংবাদিকদের বলেন, পার্বত্য পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য দেবোলাল গার্লোসার একনায়কত্ববাদে অতিষ্ঠ হয়ে এবার তাঁর অপসারণ চেয়ে বিজেপির তৃণমূল স্তরের কর্মীরা ধরনায় বসতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, পার্বত্য পরিষদে গত নয় বছর থেকে বিজেপির সরকার চলছে। কিন্তু তার পরও বিজেপির তৃণমূলস্তরের কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে চাকরি, ঠিকাদারি ও বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, পার্বত্য পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য দেবোলাল গার্লোসা তাঁর কাছের কতিপয় এবং আত্মীয়স্বজনকে চাকরি, ঠিকাদারি ও বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছেন।
অনুপ লাংথাসা আরও বলেন, পার্বত্য পরিষদের বিগত নির্বাচনে পরিষদের সাতটি আসনে বিজেপি যাঁদের প্রার্থী করেছিল তাঁদের সঙ্গে দেবোলাল গার্লোসার তেমন ভালো সম্পর্ক না থাকায় সে সময় দেবোলাল গার্লোসা ওই সাতটি আসনে বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিজের মানুষকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে অবতীর্ণ করেছিলেন। তিনি বলেন, দেবোলাল গার্লোসা বিজেপিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে সরকার বা বিজেপি দেবোলাল গার্লোসার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এই আন্দোলন আরও তীব্র তোলা হবে। এই হুঁশিয়ারি দিয়ে অনুপ লাংথাসা বলেন, প্রয়োজনে বিজেপির নেতা কর্মী ও তৃণমূল স্তরের কর্মীরা সব একযোগে দল থেকে পদত্যাগ করবেন।
এদিকে উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য দেবোলাল গার্লোসা ও জেলা বিজেপির সভাপতি ধৃতি থাওসেন জানিয়েছেন, আজ হাফলঙে জেলা কমিশনার কার্যালয়ের সামনে ধরনায় যাঁরা বয়েছেন, তাঁরা ভারতীয় জনতা পার্টির আদর্শের পরিপন্থী। তাঁরা কেবল ব্যক্তিগত লাভ এবং স্বার্থের জন্য দলের সাথে নিজেদের যুক্ত করেছেন এবং দলের নাম অপব্যবহার করেছেন। কিছু লোভী তথাকথিত স্বঘোষিত সমাজকর্মীর মাধ্যমে দরিদ্র গ্রামবাসীদের তাঁদের নিজস্ব অ্যাজেন্ডা পূরণের জন্য ব্যবহার করেছেন তাঁরা।
বিজেপি সততা, শৃঙ্খলা এবং জনসেবার পক্ষে। মিথ্যা অজুহাতে দলের লক্ষ্যকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়া বা জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার যে কোনও প্রচেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। বিজেপির সর্বস্তরের কর্মী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি এ ধরনের প্ররোচনার শিকার না হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
হিন্দুস্থান সমাচার / বিশাখা দেব