বক্সনগর (ত্রিপুরা), ১২ জুলাই (হি.স.) : শনিবার বিকেলের আকাশটা আজ যেন অকারণেই মলিন হয়ে উঠেছিল। মেঘে ঢাকা আলো, নিস্তব্ধ বাতাস—সব মিলিয়ে চারপাশে এক অজানা অশনি সংকেত। আর সেই সংকেত যেন সত্যি করেই ঘটিয়ে দিল এক দুর্ঘটনা। ১১ বছরের ফুটফুটে রাজেশ দাস, মায়ের চোখের মণি, বাবার ভরসা—এদিন দুপুরে ঘাতক এক বালির গাড়ির নিচে পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারাল। হাসি-আনন্দে ভরা এক শিশুর জীবন, এক নিমিষেই থেমে গেল মা শিউলির চোখের সামনেই।
হাসপাতালের সাদা বিছানায় শুয়ে নিথর রাজেশ। শিউলি দেবী ছেলের মাথায় হাত রেখে বসে আছেন নিশ্চুপ, জলের ধারা থেমে গেছে অনেক আগেই। ঠোঁট কাঁপে, কিন্তু কোনও শব্দ নেই। মনে শুধু ঘুরপাক খায় সেই শেষ কথা—“মা, আমি বড় হয়ে চাকরি করব। তুই ঠিক অফিসার হবি... মা তোকে সব দিবে।” কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি, সেই স্বপ্ন আর কোনোদিন পূরণ হবে না।
দুর্ঘটনাটি ঘটে সিপাহীজলা জেলার মেলাঘর পোয়াংবাড়ী বাজার সংলগ্ন এলাকায়। বিয়ের আনন্দে মেতে ওঠা রাজেশ মায়ের সঙ্গে গিয়েছিল জল আনতে। আর তখনই টিআর ০১এফ১৬০২ নম্বরের বালি বোঝাই লরিটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাকে পিষে দেয় বলে অভিযোগ। স্থানীয়রা জানায়, ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় রাজেশ। খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজিত জনতা ঘাতক গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। পুলিশ এসে গাড়ি ও চালককে আটক করে। রাস্তায় রাজেশের নিথর দেহ পড়ে থাকতেই ছুটে এসে মা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন। “তুই আমাকে ফেলে কোথায় গেলি রে? আমি তোকে ছাড়া বাঁচবো কিভাবে? তোর প্রিয় জামাটা এখনও ধুয়ে রেখেছি... তুই তো খিচুড়ি খেতে ভালবাসতিস।”এই কান্না শুধু একজন মায়ের কান্না নয়—এ কান্না যেন আকাশ ভেদ করে ঈশ্বরেরও অন্তর কাঁপিয়ে তোলে।
মা জানে—তার ছেলেটা এখনও হয়ত কোথাও খুঁজছে প্রিয় খেলনা, প্রিয় জামা, আর মায়ের হাতে বানানো সেই খিচুড়ির স্বাদ। হয়ত কোনও অদৃশ্য জগতে বসে মাকে ডাকছে—মা, আমি খেলতে যাব, পরে গল্প শোনাবি তো?এই দুর্ঘটনা আমাদের সমাজকে আবারও প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় কেন এখনও বেপরোয়া ট্রাক-লরি রাস্তায় শিশুদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে? কেন কোনও নিরাপত্তা নেই রাস্তার ধারে হেঁটে চলা শিশুদের জন্য? এই মৃত্যু শুধু এক শিশুর নয়, এক গোটা পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ। এই কান্না শুধুই মায়ের নয়—এটা এক সভ্যতার, এক সমাজের ব্যর্থতার প্রতিধ্বনি। আর কত রাজেশ?
হিন্দুস্থান সমাচার / Subhash Chandra Das