দুর্গাপুর, ১৫ জুলাই (হি.স.): ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে ফের পশ্চিমবঙ্গে পা রাখতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এবার তাঁর সভা হতে চলেছে শিল্পশহর দুর্গাপুরে। সরকারি প্রকল্প উদ্বোধনের পাশাপাশি থাকছে রাজনৈতিক সমাবেশও। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর সফর ঘিরে আশায় বুক বেঁধেছেন রাজ্যের রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক, সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, সকলেই। কারখানা পুনরুজ্জীবন, দামোদর ব্যারেজ সংস্কার, নতুন শিল্পের সম্ভাবনা এই সব কিছুই উঠে আসছে আলোচনায়।
বঙ্গ বিজেপি ইতিমধ্যেই ২০২৬-র বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। রাজ্যের ১০টি বড় সভার পরিকল্পনা রয়েছে, যার দ্বিতীয়টি হতে চলেছে দুর্গাপুরে। জানা গিয়েছে, ১৮ জুলাই বিকেলে বিহারের মতিহার থেকে অন্ডাল হয়ে প্রধানমন্ত্রী পৌছাবেন দুর্গাপুরের সেইলের নেহরু স্টেডিয়ামে। সেখানেই হবে তাঁর সভা। সভা হবে মূলত দুই বর্ধমান ও বাঁকুড়া জেলার চারটি লোকসভা কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে। সভাস্থলে মাঠ পরিদর্শনে ইতিমধ্যেই এসেছেন কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব।
প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই উদ্বোধন হতে পারে রেল, সেইল, গেইল-এর একাধিক প্রকল্প। পাশাপাশি শিল্পশহরে কেন্দ্রীয় বার্তা দিতে গিয়ে উঠে আসতে পারে বহু প্রতীক্ষিত কারখানাগুলির পুনরুজ্জীবনের প্রসঙ্গ।
প্রসঙ্গত ,দুর্গাপুরের বুকে একসময় গড়ে উঠেছিল একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প—ডিএসপি, অ্যালয় স্টিল, এমএএমসি, বিওজিএল, হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার। কিন্তু ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে একে একে মুখ থুবড়ে পড়ে বহু কারখানা। ১৯৯২ সালে বন্ধ হয়ে যায় হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার। ২০১৫-তে কেন্দ্র সরকার ছ’টি বন্ধ সার কারখানার পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা নেয়, যার মধ্যে দুর্গাপুরও ছিল। ৬ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ হলেও জমি সমস্যায় থমকে রয়েছে কাজ।
তেমনি, খনি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারী এমএএমসি কারখানা ২০০২ সালে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরে কোল ইন্ডিয়া, ডিভিসি, বিইএমএল-এর যৌথ উদ্যোগে অধিগ্রহণ হলেও উৎপাদন আর শুরু হয়নি। বিওজিএলের ভবন এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপ। তবে কেন্দ্র সেইলের ডিএসপি কারখানার আধুনিকীকরণের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যে জমি ঘেরার কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ডিভিসির দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টে ৮,৫০০ কোটি টাকায় সুপার ক্রিটিক্যাল ইউনিট তৈরির কাজও চলছে। যদিও জমি জবরদখলের জন্য সেখানেও কাজ বাধাপ্রাপ্ত।
বামপন্থী সংগঠন সিটুর নেতা বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “বন্ধ সার কারখানা, এমএএমসি পুনরুজ্জীবন চাই। বিওজিএলের জমিতে নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প হোক। পাশাপাশি দামোদর ব্যারেজের সংস্কার ও নতুন সেতু নির্মাণ জরুরি। শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার জন্য নতুন শ্রম কোড বাতিল করতে হবে।” কংগ্রেস নেতা দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, “বিধানচন্দ্র রায়ের গড়া স্বপ্নের শহর আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত। দেশে মেধা, পরিকাঠামো, প্রযুক্তি সব থাকা সত্ত্বেও কেন পুনরুজ্জীবন হল না, তার জবাব চাই। প্রধানমন্ত্রী যেন বন্ধ কারখানার তালা খোলার চাবি নিয়েই আসেন।”
বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুই বলেন, “ডিটিপিএস-এ আধুনিকীকরণ হচ্ছে। গ্যাস পাইপলাইন কাজও দ্রুত গতিতে চলছে। ডিএসপি-তে আধুনিকীকরণ হবে। সার কারখানার পুনরুজ্জীবন জমি সমস্যায় আটকে। রাজ্য সরকার সহযোগিতা করছে না। তাই পরিবর্তন দরকার।”
২০২৬ নির্বাচনের আগে শিল্পাঞ্চল থেকে মোদীর বার্তা ঠিক কোন পথে যাবে, সেদিকেই তাকিয়ে শিল্পশহরবাসী। শুধু ভোট নয়, দুর্গাপুরের ভবিষ্যৎও জড়িয়ে মোদীর বক্তৃতার সুরে।
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / জয়দেব লাহা