হাফলং (অসম), ১৯ আগস্ট (হি.স.) : ডিমা হাসাও জেলার অন্তৰ্গত উমরাংসো থানাধীন লংকুর বীনা ইংতিপির দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পাঁচ অভিযুক্তের ফাঁসির দাবিতে আজ মঙ্গলবার কারবি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, কারবি আংলং জেলার ইউনাইটেড উইমেন ফোরাম, ডিমাসা স্টুডেন্টস্ ইউনিয়ন, ডিমাসা মহিলা সমিতি সহ বিভিন্ন দল-সংগঠন হাফলং শহর উত্তাল করে তুলেছে।
আন্দোলনকারীরা ফাস্টট্রেক আদালতে নৃশংস এই ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বীনা ইংতিপির দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত পাঁচ নরপিশাচের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল করে তুলেছেন জেলা কমিশনার কার্যালয়ের প্ৰাঙ্গণ।
তাঁদের প্রশ্ন, ‘এত বড় ঘটনার পর কোথায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কোথায় ডিমা হাসাও জেলার অভিভাবক মন্ত্রী, কোথায় স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী নন্দিতা গার্লোসা, কোথায় উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য দেবোলাল গার্লোসা?’
আন্দোলকারীদের বক্তব্য, ‘এখন রাজনীতি করার সময় নয়, আপনারা সবাই আমাদের সাথে বেরিয়ে আসুন। বাইরে থেকে এসে বহিরাগতরা আমাদের জনজাতীয় মহিলা মা বোনদের ধর্ষণ করে হত্যা করছে। আজ আমাদের সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে, কাল আপনাদের সঙ্গে হবে। উন্নয়নের নামে বহিরাগতদের উদ্যোগ স্থাপনে জমি বণ্টন করা হচ্ছে। আর বহিরাগতরা এখানে এসে এ ধরনের জঘন্য কাজে লিপ্ত হচ্ছে, তা কোনও অবস্থায় মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনা উত্তরপ্রদেশ বা বেঙ্গালুরুতে সংগঠিত হয়নি, আমাদের ঘরে সংগঠিত হয়েছে, আমাদের মহিলারা এখন ঘরেও সুরক্ষিত নয়...’ ক্ষোভ উগরে দিয়ে তাঁরা মহিলাদের সুরক্ষার দাবি জানান।
তাঁরা সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘বীনা ইংতিপির পরিবার যদি ন্যায়বিচার না পায়, তা-হলে অদূর ভবিষ্যতে ন্যূনতম কুড়ি হাজার মানুষ জমায়েত হয়ে জেলা কমিশনার কার্যলয়ের সামনে আন্দোলন সংগঠিত করা হবে।
তার পরও যদি ন্যায় না পাওয়া যায়, তা-হলে ডিমা হাসাও এবং কারবি আংলং জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বনধ ডাকা হবে বলে আজ হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
এদিকে কারবি আংলং ইউনাটেড উইমেন ফোরাম-এর এক মহিলা সদস্য বলেন, গত ১৩ আগস্ট নিজের দোকান বন্ধ করে বাড়িতে যাওয়ার পথে লংকুতে ১২০ মেগাওয়াট নিম্ন কপিলি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজে যুক্ত পাঁচ নরপিশাচ এলঅ্যান্ডটি কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার আরিয়ান চৌধুরী, আবদুল রহমান, রবীন্দ্র রাণা, সত্য আচার্য, স্টিফেন হানসেরা দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করেছে বীনা ইংতিপিকে।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ওই মহিলা বলেন, ‘এত বড় ঘটনার পর দেবোলাল গার্লোসা কোথায় লুকিয়ে আছেন? আপনাদের বিজেপি দলের স্লোগান বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও কোথায় গেলো? এখন তো মহিলারা নিজের ঘরেই সুরক্ষিত নয়’, মন্তব্য করে ওই মহিলা বলেন, মহিলারা এখন বাইরে বেরোতে পারে না, কোথাও যেতে পারেন না, এই অবস্থায় অসমের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মহিলাদের সুরক্ষা প্রদান করার দাবি জানান তিনি যাতে ঘরে ও বাইরে মহিলাদের নির্যাতিত হতে না হয়।
প্রতিবাদস্থলে দাঁড়িয়ে ড্যানিয়েল লাংথাসা বলেন, লংকুতে বীনা ইংতিপিকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করে ফেলে দেওয়ার ঘটনা অসম তথা দেশের জন্য লজ্জার বিষয়। এ ঘটনা প্রমাণ করে, ডিমা হাসাও জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কতটুকু অবনতি ঘটেছে। তিনিও বীনা ইংতিপির দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত পাঁচ অভিযুক্তের ফাস্টট্রেক আদালতে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানান।
হিন্দুস্থান সমাচার / বিশাখা দেব