পাথারকান্দি (অসম), ১ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : গরিব-দুখি এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণিভুক্ত মানুষজনকে স্বস্তি দিতে যথাসম্ভব সহায়তা প্রদান করতে অঙ্গীকারবদ্ধ আমাদের সরকার। বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
অসমের নারী সমাজকে সবলীকরণের মাধ্যমে তাঁদের পরিবর্তনের বাহকরূপে গড়ে তোলার প্রয়াসের অংশস্বরূপ আজ সোমবার শ্রীভূমি জেলার অন্তর্গত পাথারকান্দি বিধানসভা এলাকার আত্মসহায়ক গোট যথাক্রমে পথারকান্দি ডেভেলপমেন্ট ব্লকের ৭,২৪২ জন সুবিধাভোগী এবং লোয়াইরপোয়া ডেভেলপমেন্ট ব্লকের ৮,৪২৯ জনকে নিয়ে মোট ১৫,৬৭১ জন সুবিধাভোগীর (মহিলা) হাতে ‘মুখ্যমন্ত্রীর মহিলা উদ্যমিতা’ প্রকল্পের ১০ হাজার টাকার চেক তুলে দিয়ে আয়োজিত সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা।
সমাবেশে প্রদত্ত ভাষণে ‘মুখ্যমন্ত্রীর মহিলা উদ্যমিতা’ প্রকল্পের অধীনে প্রাথমিকভাবে প্ৰাপ্ত ১০ হাজার টাকা উৎপাদনমূলক কাজে ব্যবহার করে নিজেকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার পাশাপাশি পরিবারকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে উদ্যমী মহিলাদের আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই টাকা মহিলারা নিজস্বভাবে কোনও উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার করতে পারেন, নতুবা আত্মসহায়ক গোটের অন্যান্য সদস্য (মহিলা)-দের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে এই তহবিল দিয়ে ব্যবসা করতে পারেন। তবে উদ্যমী মহিলারা যদি ইচ্ছা করেন, তা-হলে এই টাকা তাঁদের পরিবারের কোনও সদস্যের ব্যবসায়ও ব্যবহার করতে পারেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর মহিলা উদ্যমিতা’ প্রকল্পের অধীনে প্ৰদত্ত এই অৰ্থ-সাহায্যই শেষ নয়। আজ প্ৰাপ্ত ১০ হাজার টাকা মহিলারা কীভাবে, কী ধরনের কাজে ব্যবহার করেছেন, সে সম্পর্কে রাজ্য সরকার আগামী বছর এক সমীক্ষা চালাবে। যদি প্রাপ্ত টাকার সদ্ব্যবহার হয়ে থাকে, তা-হলে সংশ্লিষ্ট মহিলারা আরও ২৫ হাজার টাকা করে পাবেন। এই ২৫ হাজার টাকার মধ্যে রাজ্য সরকার ১২,৫০০ টাকা এবং অবশিষ্ট ১২,৫০০ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করা হবে।
ড. শৰ্মা আরও বলেন, এই টাকার সদ্ব্যবহার হলে পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবসার জন্য আরও ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, মোট তিনটি পর্যায়ে আত্মসহায়ক গোটের মহিলারা মোট ৮৫ হাজার টাকা পাবেন ব্যবসা করার জন্য। তাই তিনি আবারও আহ্বান জানিয়ে বলেন, আজ প্রাপ্ত টাকার সদ্ব্যবহার করুন অনুৎপাদনমূলক কাজে ব্যবহার করবেন না।
প্রসঙ্গক্রমে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে অরুণোদয় ৩.০ রূপায়ণের কাজ শুরু করবে রাজ্য। এই প্রকল্পের অধীনে মহিলাদের ১,২৫০ টাকা ছাড়াও রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার কেনার জন্য ২৫০ টাকা করে ভরতুকি প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সঙ্গে আরও বলেন, আগামী ১ নভেম্বর থেকে রেশন কার্ডের মাধ্যমে বাজারের চেয়ে কম দামে ডাল, চিনি এবং লবণ প্রদানের পদক্ষেপও নেবে রাজ্য সরকার।
জনসাধারণকে স্বস্তি দিতে পূর্ববর্তী আর কোনও সরকার এ ধরনের প্রকল্প চালু করেছে কিনা, প্রশ্ন করে মুখ্যমন্ত্রী জনতার আশীর্বাদ কামনা করেছেন। জনসাধারণের আশীর্বাদের বলেই রাজ্য সরকার এ ধরনের কল্যাণকামী কাজ করতে দুগুণ উৎসাহ পাবে। তিনি বলেন, আপনারা আমাকে আশীৰ্বাদ করবেন। গরিব-দুখি, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষজনকে স্বস্তি দিতে যথাসম্ভব সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত।
এছাড়া অসমের ছাত্রীদের শিক্ষার্জনে সুবিধা দিতে নিযুত মইনা প্রকল্পের বর্ণনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পুষ্টিকর খাদ্য কেনার জন্য প্রতিমাসে ৩০০ টাকা করে প্রদান করার পরিকল্পনাও সরকার গ্রহণ করেছে।
আজকের বিশাল অনুষ্ঠানে অন্য গণ্যমান্য বক্তিবর্গ সহ হাজারো জনতার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ দফতরের মন্ত্রী কৌশিক রায়, পশুপালন ও পশু চিকিৎসা প্রভৃতি দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল, সাংসদ কৃপানাথ মালাহ, বিধায়কগণ যথাক্রমে বিজয় মালাকার, সিদ্দেক আহমেদ ও কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, অসম রাজ্য গ্রামীণ জীবিকা মিশনের অধিকর্তা কুন্তলমণি শর্মা বরদলৈ, শ্রীভূমির জেলাশাসক প্রদীপকুমার দ্বিবেদী, পুলিশ সুপার প্রমুখ প্রশাসনিক আধিকারিকগণ।
হিন্দুস্থান সমাচার / মনোজিৎ দাস