শিশু-বিষয়ক খবর পরিবেশনে সতর্কতা ও সচেতনতার নিদান বিশিষ্টদের
অশোক সেনগুপ্ত কলকাতা, ১৫ সেপ্টেম্বর (হি.স.): “ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে”। লিখেছিলেন কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। আবার কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য অনেককাল আগেই লিখেছিলেন পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি। এতকাল বাদে আমরা কতটা অন্তর থেকে তা বিশ্
প্রেস ক্লাবের সভাপতি ডঃ স্নেহাশিস সুর


প্রেস ক্লাবের সভাপতি ডঃ স্নেহাশিস সুর


অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা, ১৫ সেপ্টেম্বর (হি.স.): “ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে”। লিখেছিলেন কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। আবার কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য অনেককাল আগেই লিখেছিলেন পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি। এতকাল বাদে আমরা কতটা অন্তর থেকে তা বিশ্বাস করি? সাংবাদিক হিসাবে কতটা মানুষের কাছে ওই বার্তা পৌঁছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি? এইসব বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে নিরন্তর। সোমবার এ নিয়ে এক বিশ্লেষণী কর্মশালা হল কলকাতা প্রেস ক্লাবে। আয়োজনের অন্যতর উদ্যোক্তা ছিল চাইল্ড ইন নিড ইন্সটিট্যুট (সিনি)।

যুগান্তরের সাথে সাথে বদলিয়েছে সামাজিক ধ্যানধারণা। বদল হয়েছে প্রচারমাধ্যমের ঘরানাও। বিভিন্ন ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিশুরা সংপৃক্ত হয়ে পড়ে। শিশুর মানসিক বিকাশ ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে সেই সব খবর অত্যন্ত সতর্ক ও সচেতনভাবে পরিবেশন করতে সংবাদমাধ্যমকে আর্জি জানালেন বিশিষ্টরা।

‘সিনি’-র প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার ডঃ সমীর চৌধুরী বলেন, ১৯৭৪ সালে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কাজ শুরুর সময় শিশুমৃত্যুর হারের দিকে আমাদের নজর যায়। নিরন্তর সেই হারের ওপর লক্ষ্য রেখে সমীক্ষা করি। তাতে দেখি, বিভিন্ন স্তরে শিশুবান্ধব পরিস্থিতির বড় অভাব। অপুষ্টি, সুস্বাস্থ্য, শিশু-অধিকার সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে নানা স্তরে সচেতনতা শিবির শুরু করি। সরকারের সহযোগিতাও মেলে। অবশ্যই সে সব কাজের সুফল মিলেছে।

সমীরবাবু বলেন, কলেরার মতো কনজেনিয়াল রোগে মৃত্যুর রাশ টানা গিয়েছে। কিন্তু মৃত্যু বেড়েছে নানা ধরণের ‘নন কনজেনিয়াল’ রোগে। কিন্তু কিছু দিক থেকে শিশুদের ভবিষ্যৎ বেশ দুঃস্বপ্নের। নানা শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে শিশুদের একাংশ। ওবিসিটি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। জাঙ্কফুড থেকে শিশুদের যথাসম্ভব দূরে রাখা ভালো। এসবের পাশাপাশি সচেতন থাকা দরকার শিশুবান্ধব সাংবাদিকতায়।

আলোচনায় কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ডঃ স্নেহাশিস সুর বলেন, গত সাত বছর ধরে আমরা ‘ইউনিসেফ’-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোচনাশিবির করেছি। ‘সিনি’-র সঙ্গে শিশু-অধিকার নিয়ে এই শিবিরের বিশেষ উপযোগিতা রয়েছে। কারণ, শিশু-বিষয়ক খবর, বিশেষত যেগুলোর সঙ্গে অপরাধের সম্পর্ক থাকে, সেগুলো লিখতে গেলে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সতর্কতা রাখতে হবে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন সম্পর্কে প্রচ্ছন্ন ধারণা রাখলে সংবাদ পরিবেশনে সুবিধা হবে।

ডঃ স্নেহাশিস সুর বলেন, শিশুদের সম্পর্কে যখন লিখব, তাদের পূর্ণ বয়স্কের মতো সম্মান দিতে হবে। শ্রদ্ধা বা মানের দিক থেকে তাকে ছোট চোখে দেখলে হবে না। এ ব্যাপারে আমাদের অতিরিক্ত পেশাগত দায়িত্ব নিতে হবে। দেখতে হবে পরিবেশিত সংবাদে কোনও শিশু যেন মানসিক চাপে না পড়ে। তার জায়গায় গিয়ে আমাদের বুঝতে হবে, আমাদের খবরে তাকে সমস্যায় পড়তে হতে পারে কিনা।

বিভিন্ন দেশ শিশু-বিষয়ক খবর পরিবেশনে নিজস্ব নীতির কথা জানিয়েছে। এ কথা জানিয়ে ডঃ সুর বলেন, “ইউনিসেফও এ নিয়ে বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে শিশুদের ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করে মুখরোচক সংবাদ তৈরির উত্তর পাওয়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকা, তাদের মুখে শোনা উত্তরের বস্তুগত সত্যতা বা গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করে নেওয়ার নিদানও দেন ডঃ সুর।

জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট, ‘যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা আইন’ (Protection of Children from Sexual Offences Act) অর্থাৎ ‘পক্সো’, ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি), ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস), ১৯৫৬ সালের ইমমরাল প্রিভেনশন অফ ট্রাফিকিং অ্যাক্ট, ১৯৫২ সালের সিনেমাটোগ্রাফিক অ্যাক্ট, ১৯৭১ সালের মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগনান্সি অ্যাক্ট, ১৯৫৬ সালের ইয়ং পার্সন হার্মফুল পাবলিকেশন অ্যাক্ট, প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট প্রভৃতির বিভিন্ন ধারায় শিশুদের ব্যাপারে কী উল্লেখ রয়েছে, পাওয়ার পয়েন্টে পর্দায় সেগুলোর নির্যাস দেখান ডঃ সুর।

স্নেহাশিসবাবু সতর্ক করে দেন, আইপিসি-র ২২৮ (ক) এবং বিএনএস-এর ৭২ ধারায় খবরে নির্যাতিত শিশুর নাম এবং ছবির উল্লেখে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই সঙ্গে এটাও স্মরণ করিয়ে দেন, দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডে দোষী এক নাবালকের নামও প্রকাশ করা হয়নি। সে এখন একটা কাজ করছে।

‘সিনি’-র সিইও ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য আলোচনাশিবিরে বলেন, আমাদের সবার ঢ়ক্ষ্য হওয়া উচিত একটা শিশুবান্ধব সমাজ তৈরির। শিশু সুরক্ষার চেষ্টায় সম্প্রতি যুক্ত উল্লেখযোগ্য আইনগুলোর অন্যতম প্রধান হলো ‘ডেটা প্রসেসিং অ্যাক্ট’। এর জন্য ‘ডেটা প্রসেসিং বোর্ড’ তৈরি হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে পরিবেশিত খবরে আপত্তি বা প্রশ্ন থাকলে সেটি পেশ করার এক্তিয়ার আছে সংশ্লিষ্ট শিশুর।

ইন্দ্রানী বলেন, শিশু-সম্পর্কিত পরিবেশিত খবরের তথ্যে যেন ভুল না থাকে, সে ব্যাপারে আমরা সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতা চাইছি। শিশু-বিষয়ক খবর পরিবেশনে আমাদের সকলের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত সংবেদনশীল চর্চা,য়তাদের ব্যক্তিগত স্বীকৃতি ও সম্মানরক্ষা।

প্রসঙ্গত, শিশুর হাসিতে গড়ে উঠুক এক নতুন পৃথিবী”— কবি সুকান্তের ‘ছাড়পত্র’-তে আজকের সমাজের পাঠ সম্পর্কে দেওয়া হয়েছিল সচেতনতার বার্তা। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রতি বছর দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের (UNCRC) মাধ্যমে শিশুদের অধিকারগুলো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও কার্যকর করার চেষ্টা হয়।

---------------

হিন্দুস্থান সমাচার / অশোক সেনগুপ্ত




 

 rajesh pande