দুর্গাপুর, ১৯ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : অপরিস্কার, মিথ্যাচার বা অনাচার-একেবারেই পছন্দ করেন না মা দুর্গা। তাই অন্ডালের খান্দরা বকসি বাড়ির পূজিত মা দুর্গাকে স্থানীয়রা ডাকেন ‘ক্ষ্যাপা মা’ নামে। প্রায় আড়াই শতকেরও বেশি সময় ধরে বকসি বাড়ির এই দুর্গাপুজো ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস ও জনশ্রুতি।
প্রায় ২৭৭ বছর আগে স্বপ্নাদেশ পেয়ে গোবর্ধন বকসি শুরু করেন দুর্গাপুজো। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী হলেও তিনি শক্তির উপাসক ছিলেন। বর্ধমানের মহারাজার সেনাপতি পদে থেকে ‘বকসি’ উপাধি পান তিনি। কথিত আছে, মায়ের নির্দেশে কাটোয়ার দাঁইহাটের এক ছুতোর প্রতিমা গড়ার দায়িত্ব নেন। আজও সেই বংশের কারিগররা প্রতিমা গড়ে আসছেন। বিশেষত্ব হলো, এখানে দেবীর আট হাত ছোট, সামনের দুটি হাত বড় এবং গনেশ-কার্তিকের অবস্থান উল্টো।
পুজোয় বলির নিয়মও আলাদা—সপ্তমীতে একটি ছাগ, অষ্টমীতে একরঙা ছাগ এবং নবমীতে একটি ছাগ, একটি মোষ, একটি চালকুমড়ো ও এক গোছা আখ বলি হয়। তবে পরিবারের কেউ বলি দেখা বা রক্ত দেখা এড়িয়ে চলেন।
কথিত আছে, মায়ের রোষের ঘটনাও কম নয়। এক মহিলা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিব্যি খাওয়ায় সাপের দংশনে মৃত্যু হয়। আবার এক কারিগর চক্ষুদান না করায় অন্ধ হয়ে যায়।
এই পূজোয় ঢাক মানত বিশেষ আকর্ষণ। মানত পূর্ণ হলে ঢাক বাজানো হয়, আর সপ্তমীর নবপত্রিকা স্নান ঘিরে চলে শোভাযাত্রা। পুরো বৈষ্ণব মতে পূজা হলেও বকসি পরিবার নিরামিষ আহার করেন। ক্ষ্যাপা মা আজও স্থানীয়দের বিশ্বাস—সকলের মনোবাসনা পূর্ণ করেন, আর অনাচার সহ্য করেন না।
-------
---------------
হিন্দুস্থান সমাচার / জয়দেব লাহা